ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের রাফাহতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ২১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পৃথক দুটি হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে এবং নিহতদের মধ্যে অনেকেই শিশু। এছাড়া হামলায় নিহতদের মধ্যে দুটি পরিবারের ৭ জন ও ৯ জন রয়েছেন বলে জানা গেছে। সোমবার (৬ মে) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ইসরায়েলি হামলার পরে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ নিহত নিহত হওয়ার কথা জানানো হলেও পরে তা বাড়িয়ে প্রথমে ১৬ এবং পরে ২১ জনে পৌঁছেছে বলে জানানো হয়। আল জাজিরা বলছে, রাফাহতে ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় নিহতের সংখ্যা এখন ২১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে আল জাজিরা আরবির সহকর্মীরা জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে।
রাফাহতে ইসরায়েলের পৃথক দুই হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ হামলায় অন্য ঘরগুলোর মধ্যে আবু লেবদা পরিবার, আল-আত্তার পরিবার, শ্তেইউই পরিবার, আল-হাশাশ পরিবার, কিশতা পরিবার এবং আরমিলাত পরিবারকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
হামলার পর ঘটনাস্থলে প্রথম পৌঁছানো উদ্ধারকারীরা বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, সর্বশেষ এই ইসরায়েলি হামলায় এক পরিবারের সাতজন এবং অন্য পরিবারের নয়জন নিহত হয়েছেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরের দুটি ভিন্ন স্থানে হামলার এই ঘটনা ঘটে।
এর আগে দক্ষিণ গাজার এই শহরের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে বেশ কয়েককটি বাড়িতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দুটি পৃথক বিমান হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে রাফাহ শহরের একটি বাড়িতে হামলায় অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
এছাড়া গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা অফিস আগেই জানায়, রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার ভোরের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরের ১১টি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। হামলার ফলে কয়েক ডজন মানুষ নিহত, আহত এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হয়েছেন।
এর আগে, গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহতে পরিকল্পিত স্থল হামলা ‘আসন্ন’ বলে রোববার জানান ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। মধ্য গাজার নেটজারিম করিডোরে ইসরায়েলি সেনা সদস্যদের তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা উদ্বেগজনক যেসব লক্ষণ লক্ষ্য করছি, তাতে বোঝা যাচ্ছে- হামাস আমাদের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে চায় না। এর মানে, রাফাহতে সেনা অভিযান আসন্ন।’
ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বিরোধিতা সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ‘হামাসের বাকি ব্যাটালিয়নগুলোকে’ পরাজিত করতে রাফাহ আক্রমণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। টানা সাত মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যে ১৪ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি এখানে আশ্রয় নিয়েছেন।
মূলত রাফাহ হলো গাজা উপত্যকার শেষ অবশিষ্ট এলাকা যেখানে ইসরায়েল এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে তার সেনাদের প্রবেশের ঘোষণা দেয়নি।
গ্যালান্ট বলেছেন, ‘এই যুদ্ধের জন্য আমাদের স্পষ্ট লক্ষ্য রয়েছে: আমরা হামাসকে নির্মূল এবং গাজায় আটক বন্দিদের মুক্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা (চুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য) একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়েছি...।’
এদিকে গত বছরের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নিরলস আক্রমণে কমপক্ষে ৩৪ হাজার ৬৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে রোববার অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, টানা সাত মাসের এই হামলায় আরও ৭৮ হাজার ১৮ জন আহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় ২৯ জন নিহত ও আরও ১১০ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন এবং উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
রাফার বেসামরিক নাগরিকদের শহর ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা বলছে— তারা দক্ষিণ গাজার রাফা শহরের জনগণকে সরে যেতে ‘উৎসাহিত’ করছে। নতুন আশ্রয়ণ হিসেবে আইডিএফ নিকটবর্তী খান ইউনূস এবং মাওয়াসিতে যেতে বলা হয়েছে রাফা শহরের বাসিন্দাদের।
আইডিএফ বলছে, এটি ‘সীমিত সুযোগ’। উচ্ছেদ অভিযান নয়। প্রাথমিকভাবে সেখান থেকে অন্তত ১ লাখ ফিলিস্তিনিকে মধ্য গাজায় সরিয়ে নেওয়া হবে। বর্তমানে অঞ্চলটিতে প্রায় ১২ থেকে ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি অবস্থান করছে।
সূত্র: বিবিসি ও আনাদোলু