ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ইসরাইলি হামলায় ৬১ বছর বয়সি সিনওয়ার নিহত হন। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে তার নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে হামাস।
সিনওয়ার ২০১৭ সাল থেকে গাজায় এই সংগঠনটির রাজনৈতিক প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তথ্য মতে, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের আকস্মিক হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তথা মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিনওয়ার।
চলতি বছরের আগস্টে হামাসের শীর্ষ নেতা ও রাজনৈতিক শাখার সাবেক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর গোষ্ঠীটির দায়িত্ব নেন সিনওয়ার। গত ৩১ জুলাই তেহরানে এক হামলায় নিহত হন হানিয়া। ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন তিনি।
সিনওয়ারের মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, কে হচ্ছেন তার উত্তরসূরি? এই আলোচনার মধ্যে এরই মধ্যে সম্ভাব্য বেশ কয়েকজনের নাম এসেছে। এর মধ্যে রয়েছেন খালেদ মেশাল, খলিল আল হায়া, মোহাম্মদ দেইফ, মুসা আবু মারজুক, মোহাম্মদ সিনওয়ার ও মাহমুদ আল জাহার।
খালেদ মেশাল
বৃহস্পতিবার সিনওয়ার নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই লেবাননের এলবিসিআই নিউজ জানায়, হামাসের নতুন প্রধান হচ্ছেন খালেদ মেশাল। তাকে সিনওয়ারের উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত করেছে হামাস।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, খালেদ মেশাল হামাসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এখন ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনায় জড়িত মূল দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
মেশাল এর আগে ২০০৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত হামাসের নেতৃত্ব দিয়েছেন। হামাসের এই নেতা ১৯৯৭ সালে বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সে সময় তাকে হত্যার জন্য ইসরায়েলি এজেন্টরা জর্ডানের রাজধানী আম্মানে একটি গুপ্তহত্যা মিশনে তাকে বিষ মেশানো ইনজেকশন দিয়েছিল।
খলিল আল-হায়া
খলিল আল-হায়া গাজায় ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ডেপুটি। সম্প্রতি হানিয়ার তত্ত্বাবধানে ইসরাইলের সঙ্গে পরোক্ষ যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তেহরানে হানিয়ার বাসভবনেই হায়ার আবাস ছিল। কিন্তু যখন ভবনটিতে হামলা হয়, তখন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
এর আগে তিনি দুই দফায় ইসরাইলি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান। ২০০৭ সালে এক ইসরায়েল তার বাড়িতে আঘাত করে বেশ কয়েকজন আত্মীয়কে হত্যা করে। তবে সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। এরপর ২০১৪ সালে আবারও তার বাড়িতে হামলা হয়। সেই দফায়ও তিনি বেঁচে যান, তবে তার বড় ছেলে নিহত হন।
মুসা আবু মারজুক
মুসা আবু মারজুক ১৯৫১ সালে গাজার সীমান্ত শহর রাফাহে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠার সময় অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। পরে তিনি এর পলিটব্যুরোর সদস্য হন। বর্তমানেও তিনি সক্রিয়ভাবে গোষ্ঠীটির শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
মোহাম্মদ সিনওয়ার
ইসরাইলি হামলায় নিহত ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ার (৪৯)। তিনি গাজার খান ইউনিসে জন্মগ্রহণ করেন। ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদার সরাসরি ইসরাইলবিরোধী কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি হামাসের প্রথম ব্যাচে যোগ দেওয়া কর্মীদের অন্যতম।
ইসরাইলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ৯ মাস দেশটির কারাগারে বন্দি ছিলেন। পরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কারাগারেও কাটিয়েছেন তিন বছর। ২০০০ সালে তিনি কারাগার থেকে পালিয়ে যান। মোহাম্মদ সিনওয়ার হামাসের সহপ্রতিষ্ঠাতা আবদুল-আজিজ আল-রানতিসির আদর্শিক প্রভাবে বেড়ে ওঠেন।
ধারণা করা হয়, ইসরায়েলি হামলায় হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজ্জুদ্দিন আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দায়েফ নিহত হওয়ার পর তার স্থলাভিষিক্ত হন মোহাম্মদ সিনওয়ার।
মোহাম্মদ ইসমাইল দারবিশ
মোহাম্মদ ইসমাইল দারবিশ ‘আবু ওমর হাসান’ নামেও পরিচিত। তিনি হামাসের শুরা কাউন্সিলের প্রধান। ৬ অক্টোবর তাকে হামাসের শুরা কাউন্সিলের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছেন। এই বাইরে তার সম্পর্কে খুব একটা তথ্য জানা যায় না।
মাহমুদ আল জাহার
৭৯ বছর বয়সী মাহমুদ আল-জাহার পেশায় একজন সার্জন। ইসরাইল ও হামাসের অন্যান্য বিরোধীর প্রতি তার কট্টর দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বন্ধু ও শত্রুরা তাকে ‘জেনারেল’ বলে ডাকত। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে জাহার কোনো প্রকাশ্য বিবৃতি দেননি। এরপর তাকে দেখাও যায়নি। তিনি জীবিত না মৃত, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
হামাসের এই নেতা ২০০৩ সালে একবার ইসরাইলি হত্যাপ্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যান। ২০০৭ সালে গৃহযুদ্ধের পর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে হামাস ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।