বাউলের শিরোমণি ফকির লালন শাহের তীর্থভূমি কুষ্টিয়ার ছেউঁড়িয়াস্থ লালন আখড়ায় ভাঙলো সাধুর হাট। লাখো জনতার ঢলে মুখরিত লালন আখড়ায় বেজে উঠেছে বিদায়ের সুর। শনিবার (১৯ অক্টোবর) সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে বাউল-সাধুরা ফিরে গেছেন নিজ নিজ আশ্রমে। ভাব জগতের মরমী গান, ভাবের আদান-প্রদান, গুরু ভক্তি, সাধুসঙ্গ ও জমকালো সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে তিন দিনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা রেঞ্জের পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান,বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) ৪৭-ব্যাটালিয়ন কুষ্টিয়ার অধিনায়ক মো. মাহবুব মোর্শেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, ছাত্র-জনতা প্রতিনিধি মোজাক্কির রহমান রাব্বি ও মো. সাজেদুর রহমান। প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক অ্যাডভোকেট লালিম হক। সভায় সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোছা. শারমিন আখতার।
বক্তারা বলেন, লালনের ফকিরের আধ্যাত্মিকতা ও দর্শন নিয়ে দেশ-বিদেশে গবেষণা হচ্ছে। ফকির লালন ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। আত্মপরিচয়ে তিনি ছিলেন নীরব। লালনের প্রধান কীর্তি হচ্ছে তার গানের কথা ও সুর। তিনি জাত-পাতের ঊর্ধ্বে গানের মাধ্যমে মানব প্রেম ও মানবতার জয়গান গেয়ে গেছেন। সমাজের সকল অনাচার ও বৈষম্য দূরীকরণে লালনের অহিংস বানী ছড়িয়ে দেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।
নবীন-প্রবীণ বাউল শিল্পীদের পরিবেশনায় লালনের অসংখ্য হৃদয়গ্রাহী ও মনোমুগ্ধকর গান রাতভর পরিবেশিত হয়। এছাড়া মরা কালি নদীর পাড়ে বাউলদের খন্ড গানের জলসা দর্শক-শ্রোতারা ঘুরে ঘুরে উপভোগ করেন।
এর আগে প্রায় সাত হাজার বাউল ফকিরকে রাতের খাবার খিচুড়ি (অধিবাস) সকালের নাস্তা (বাল্যসেবা) পায়েস ও মুড়ি এবং দুপুরের খাবার (পূন্যসেবা) সাদা ভাত, ডাল ও সবজি খাবার দেওয়া হয়। পরে দধি দিয়ে মিষ্টিমুখ করানো হয় বাউল ও অতিথিদের। আঁখড়া বাড়িতে তিন বেলার খাবার গ্রহন বাউল-সাধুদের আচার অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষন ও পরমাত্মার পরম শান্তির অনন্য পরশ। তবে ১৮ অক্টোবর দুপুরে পূন্যসেবা গ্রহনের পরই বাউলদের অধিকাংশ মাজার ত্যাগ করেন।
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার কুমারীডাঙ্গা গ্রামের বাউল ফকির জসিম উদ্দীন জানান, লালনের মৃত্যুবার্ষিকী ও দোল পূর্ণিমার তিথিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাঁইজির মাজারে ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য মনের টানে ছুটে আসেন লালন আখড়ায়। ফকির লালনের দর্শন ও তার নির্দেশিত পথ অনুসরণের মাধ্যমে আত্মার প্রশান্তি লাভ করা সম্ভব বলে তিনি জানান।