ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ভারতে ইন্টারনেটে বিপ্লব, প্রতি জিবি ১২ রুপি

যত বেশি মানুষ অনলাইনে আসছে, ব্যবহারকারীর খরচ কমে যাচ্ছে, যা অপারেটরদের আরও সস্তা পরিকল্পনা অফার করার সুযোগ দিচ্ছে।
  • | ০২ নভেম্বর, ২০২৪
ভারতে ইন্টারনেটে বিপ্লব, প্রতি জিবি ১২ রুপি ডিজিটাল ইন্ডিয়া উদ্যোগ বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দিয়েছে।

ভারতের মোবাইল ইন্টারনেট ডেটার দাম বিশ্বে সবচেয়ে কম। এই সাশ্রয়িতা ইন্টারনেট খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে, ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকার সুযোগ পাচ্ছে এবং নতুন সুযোগের অনুসন্ধানে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি বিশেষত ভারতের মতো একটি বৈচিত্র্যময় এবং জনবহুল দেশের জন্য একটি ‘গেম-চেঞ্জার’।


সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেস (আইএমসি) ২০২৪ এর উদ্বোধনী ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইন্টারনেট ডেটার খরচ কমানোর অসাধারণ সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, এখন দেশের প্রতি গিগাবাইট ডেটার দাম মাত্র ১২ সেন্ট। ১.২ বিলিয়ন মোবাইল ব্যবহারকারী এবং ৯৫০ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘অনেক দেশে ডেটার দাম ১০ থেকে ১২ গুণ বেশি, কিন্তু ভারত সবার জন্য সংযোগ সহজলভ্য করতে একযোগে কাজ করছে।’


আইএমসি ২০২৪, যা ১৫ থেকে ১৮ অক্টোবর দিল্লির ভারত ভারত মণ্ডপমে অনুষ্ঠিত হয়। এটি টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (সিওএআই) যৌথভাবে আয়োজন করে। এটির থিম ছিল ‘ভবিষ্যৎ এখনই’। এটি ভারতের বৃহত্তর ডিজিটাল ইন্ডিয়া দৃষ্টিভঙ্গির একটি অংশ। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, সাশ্রয়ী ডেটা ডিজিটাল অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য অপরিহার্য, যা আরও বেশি মানুষকে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত করছে।


ভারতে ১.২ বিলিয়ন মোবাইল ব্যবহারকারী এবং ৯৫০ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কারণে দেশটি ডিজিটাল সংযোগে বিশ্বনেতা হয়ে উঠেছে। দেশটি এই বিশাল নেটওয়ার্ক উদ্ভাবন, উদ্যোগ এবং সামাজিক পরিবর্তনের জন্য একটি অপ্রতিরোধ্য স্কেলে কাজ করছে। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সরকার পরিচালনা এবং আরও অনেক কিছু পুনর্গঠন করছে।


ভারতে ইন্টারনেট ডেটার দাম বেশ নাটকীয়ভাবেই কমেছে। ২০১৫ সালে ১ জিবি ডেটার দাম ছিল প্রায় ২২৬ রুপি (প্রায় ৩.৩০ ডলার)। ২০১৯ সালে ডেটার দাম আরও কমে ১২ থেকে ১৪ রুপি প্রতি জিবিতে পৌঁছায় এবং বর্তমানে ২০২৪ সালে এটি মাত্র ১২ রুপি (প্রায় ০.১৭ ডলার)।


ভারতে ইন্টারনেট সংযোগের এই দাম কমেছে মূলত টেলিকম অপারেটরদের মধ্যে অতিরিক্ত প্রতিযোগিতার কারণে। ২০১৬ সালে রিলায়েন্স জিও বাজারে প্রবেশ করলে মাত্র ১৫ রুপিতে (প্রায় ০.২১ ডলারে) প্রতি গিগাবাইটে অত্যন্ত কম ডেটা ট্যারিফ অফার করে। এমন সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে অন্যান্য অপারেটররাও দাম কমাতে বাধ্য হতে হয়।


সরকারের সহায়ক নীতি এবং নিয়ন্ত্রক খরচের হ্রাসও ইন্টারনেট পরিষেবার সাশ্রয়িতা বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। যত বেশি মানুষ অনলাইনে আসছে, ব্যবহারকারীর খরচ কমে যাচ্ছে, যা অপারেটরদের আরও সস্তা পরিকল্পনা অফার করার সুযোগ দিচ্ছে। এই সবকিছু মিলিয়ে ভারতকে সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সংযোগে বৈশ্বিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।


২০২২ সালের অক্টোবরে ৫জি চালু হওয়ার পর থেকে থেকে এটির দ্রুত উন্নয়ন এবং ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা দেখা গেছে। বর্তমানে ভারতে ৭৩৮টি জেলায় চার লাখ ২৫ হাজারের বেশি ৫জি সাইট স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে ভারতে ১৮০ মিলিয়নেরও বেশি ৫জি গ্রাহক রয়েছে, এবং ২০২৯ সালের মধ্যে ৮৪০ মিলিয়ন পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৫জি উল্লেখযোগ্যভাবে ইন্টারনেট সংযোগের উন্নয়ন করেছে, যা  দক্ষিণ এশিয়ায় গড় ডাউনলোড স্পিডের চেয়ে ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।


ডিজিটাল ইন্ডিয়া উদ্যোগ বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দিয়েছে। এই উদ্যোগটি উদ্ভাবন এবং উদ্যোগকে উদ্দীপনা প্রদান করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তৈরি করেছে। ডিজিটাল পরিষেবার বিস্তার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে।


ভারতের ৬জি প্রযুক্তির জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে, যা আগামী প্রজন্মের প্রযুক্তিতে বৈশ্বিক নেতা হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে। ভারত সরকার ‘ভারত ৬জি ভিশন’ শুরু করেছে, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৬জি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং স্থাপন করা।


৬জি প্রযুক্তি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, উৎপাদন এবং কৃষি খাতে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটাবে, যার গতি হবে প্রতি সেকেন্ডে এক টেরাবিট। ৬জি উন্নয়নে ভারত সরকার নীতিগত পরিবর্তন করেছে এবং গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে।


সূত্র: দ্য টাইমস কুয়েত