ঢাকা | বঙ্গাব্দ

শেষ মুহূর্তে দুই প্রার্থী যা করেছেন, যা বলেছেন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যেখানে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার সুযোগ পাচ্ছেন।
  • | ০২ নভেম্বর, ২০২৪
শেষ মুহূর্তে দুই প্রার্থী যা করেছেন, যা বলেছেন আর মাত্র দুই দিন...

পরিচ্ছন্নতাকর্মী ডোনাল্ড ট্রাম্প


যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিকে এসে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের সমাবেশে হাজির হয়েছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বেশে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি ট্রাম্প সমর্থকদের ‘আবর্জনা’ বলে সম্বোধন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। যদিও পরবর্তীতে হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছে, ‘জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের নয়, বরং সমাবেশে মি. ট্রাম্পের ঘৃণ্য বক্তব্য সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন।’ তবে, জো বাইডেন যে কারণেই অমন মন্তব্য করে থাকুন না কেন, সেটিকে কাজে লাগিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।


আর তার জবাব হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য উইসকনসিনে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে গিয়ে তিনি ফর্মাল স্যুটের বদলে কমলা রঙ্গের সেফটি ভেস্ট পরে মঞ্চে হাজির হন, যা মূলত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পরেন। ওই পোশাক পরে এসে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা আবর্জনা নন।’ তিনি আরও বলেছেন যে, তার সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের ‘হৃদয় ও আত্মা’। জো বাইডেন ও ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রতি আক্রমণাত্মক মন্তব্য করতেও ছাড়েননি তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘তারা আমাদের পুরো দেশকে আবর্জনার মতো মনে করে’ এবং ‘দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে তারা যেসব ভয়ানক কাজকর্ম করেছেন’ তার তালিকা করছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।


সমাবেশের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিমানবন্দর থেকে একটি সাদা ময়লার ট্রাকে তুলে নেওয়া হয়। সেই ট্রাকের গাঁয়ে অংকিত ছিল তার ক্যাম্পেইনের লোগো। উইসকনসিনে কমালা হ্যারিসের সমালোচনা, ইলন মাস্ক ও সেফটি ভেস্টের প্রশংসা করার পাশাপাশি ট্রাম্প তার মূল প্রতিশ্রুতিগুলো তুলে ধরেছেন। তিনি দ্রুত মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসাকে কর প্রদান থেকে মুক্তিরও আশ্বাস দেন।


ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সমর্থকদের এও বলেছেন যে ‘নির্বাচনে যদি কমলা হ্যারিস জয়ী হন, তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাবে এবং তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরবে।’ তার মতে, কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। সমাবেশে দেয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘সে অযোগ্য। সবাই এটা জানে। কেউ তাকে সম্মান করে না, কেউ তাকে বিশ্বাস করে না, কেউ তাকে সিরিয়াসলি নেয় না। তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করা মানে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনের সাথে জুয়া খেলা। তিনি আমাদেরকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবেন।’


এরপর ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ‘স্যাভেজ মেশিন’ হিসাবে অভিহিত করেন এবং বলেন, ‘আপনাদের ছেলে-মেয়েরা শেষ পর্যন্ত একটি অবিরাম যুদ্ধের খসড়া হয়ে যাবে।’ এর কয়েক মিনিট পর তিনি আবার বলেন, তিনি ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রতিরোধ’ করবেন। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সব পরিচ্ছন্নাকর্মীকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার বক্তব্যে।


দমে যাননি কমলা হ্যারিস


ডোনাল্ড ট্রাম্প তার উইসকনসিনের সমাবেশে প্রতিপক্ষ কমালা হ্যারিসকে ব্যাপক আক্রমণ করে কথাবার্তা বললেও দমে যাননি কমলা হ্যারিস। তিনিও উইসকনসিনে সমাবেশ করেছেন। তার বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেছেন যে, উইসকনসিন এমন একটি যুদ্ধক্ষেত্র, আসন্ন নির্বাচনে যেটিতে জয়ী হওয়া আবশ্যক। উইসকনসিনবাসীদের কাছে তিনি ভোট প্রার্থনা করেন।


তবে, কমলা হ্যারিসের বক্তব্যের শুরুতে একজন প্রতিবাদকারী ‘সিজফায়ার নাউ’ বলে উচ্চস্বরে স্লোগান দিচ্ছিলেন, মানে, গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান তিনি। কমলা হ্যারিস সেই প্রতিবাদকারীর কথার উত্তর দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই চাই গাজার যুদ্ধ শেষ হোক’ এবং উপস্থিত সমর্থকদের তিনি বলেন যে এই যুদ্ধ শেষ করার জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। তিনি এক পর্যায়ে প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমাদের সবারই কথা বলার অধিকার আছে। কিন্তু এখন আমি কথা বলছি।’ এ কথা শুনে সবাই তারস্বরে চিৎকার করে ওঠে এবং এক পর্যায়ে প্রতিবাদকারীরা শান্ত হয়ে যায়। কমলা হ্যারিস তার ভাষণ চালিয়ে যান এবং তার সমর্থকদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘আমরা জিতবো।’


যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট এরপর বলেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। তিনি ভাষণে বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে দেখা যাবে তিনি তার শত্রুদের তালিকা নিয়ে অফিসে প্রবেশ করছেন। কিন্তু যখন আমি নির্বাচিত হবো, তখন আমি একটি টু-ডু লিস্ট (করণীয় তালিকা) করার কাজে মন দিবো।’ তিনি জানান, তার করণীয় তালিকার শীর্ষে রয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার খরচ কমিয়ে আনা।


গর্ভপাত, স্বাস্থ্যসেবাসহ আরও যেসব খাতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি তিনি এর আগে দিয়েছেন, সেসব বিষয় তিনি আবারও উইসকনসিনের সমাবেশে তুলে ধরেন। তিনি স্বাস্থ্যসেবার খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এবং গর্ভপাতের বিষয়ে বলেন, ‘একজন নারী তার শরীরের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিবেন, তা তার মৌলিক স্বাধীনতা। এখানে সরকার তাকে কী বলবে, সেটি তাকে অনুসরণ করতে হবে না।’


তিনি তরুণ ভোটারদের, বিশেষ করে যারা এবার প্রথম ভোট দেবেন তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমাদের প্রজন্মকে ভালোবাসি, তোমাদেরকে ভালোবাসি।’ কমলা হ্যারিস বলেন, ‘তোমরা পরিবর্তনের জন্য মুখিয়ে আছো। তোমরাই কেবল জলবায়ু সংকট সম্বন্ধে জানো। তোমরা আমাদের গ্রহ, আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করার দায়িত্বে নেতৃত্ব দিচ্ছো।’ তিনি উইসকনসিনের জনতাকে এই বলে তার বক্তৃতা শেষ করেন, ‘আপনার ভোট আপনার কণ্ঠস্বর। আপনার কণ্ঠস্বর আপনার শক্তি।’


উল্লেখ্য, আগামী পাঁচই নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট নেওয়া হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিকে ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোটারদের উদ্দেশ্যে তাদের সমাপনী বক্তব্য দিয়েছেন।