ঢাকা | বঙ্গাব্দ

অবশেষে জানা গেল কি বিটকয়েনের প্রতিষ্ঠাতার আসল পরিচয়?

বিটকয়েন, যার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে দুই ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্প।
  • | ০৩ নভেম্বর, ২০২৪
অবশেষে জানা গেল কি বিটকয়েনের প্রতিষ্ঠাতার আসল পরিচয়? বিটকয়েনের প্রতিষ্ঠাতা দাবি করা স্টিফেন মোল্লাহ। ছবি: বিবিসি

বিটকয়েন, যার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে দুই ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্প।বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক সম্পদে পরিণত হয়েছে।এমনকি এটি একটি দেশের অফিসিয়াল মুদ্রা হিসেবেও স্বীকৃত।কিন্তু এত প্রভাবশালী হওয়ার পরও, এই ডিজিটাল মুদ্রার কেন্দ্রবিন্দুতে এখনো বিরাজ করছে এক রহস্য-এর প্রতিষ্ঠাতা সাতোশি নাকামোটো আসলে কে?



প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে গিয়ে বহুজন ব্যর্থ হয়েছেন।সম্প্রতি এইচবিও-র একটি উচ্চপ্রোফাইল ডকুমেন্টারিতে কানাডার বিটকয়েন বিশেষজ্ঞ পিটার টডকে সাতোশি নাকামোটো হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছিল।তবে তিনি তা অস্বীকার করেন এবং বিষয়টি ক্রিপ্টো জগতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি।



কিন্তু বৃহস্পতিবার একটি ঘোষণায় বলা হয়, বিটকয়েনের এই রহস্যময় স্রষ্টা নিজেকে উন্মোচন করতে চলেছেন এক প্রেস কনফারেন্সে।এই ঘোষণায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সাংবাদিক মহল এবং ক্রিপ্টো জগতে।



সাতোশি নাকামোটো কে হতে পারেন, তা নিয়ে আগ্রহের একটি বড় কারণ হলো, তাকে একজন বিপ্লবী প্রোগ্রামার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।তার মতামত, দৃষ্টিভঙ্গি এবং নীতিগত অবস্থান পুরো ক্রিপ্টো জগতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।তাছাড়া, বিটকয়েনের প্রায় এক মিলিয়ন কয়েনের মালিক হওয়ায় বর্তমানে তার সম্পদের মূল্য বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।বিটকয়েনের মূল্যবৃদ্ধি এবং তার হাতে থাকা কয়েনের বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদের কারণে তার পরিচয় নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।



কিন্তু বিষয়টি আরও অদ্ভুত হয়ে দাঁড়ায় যখন প্রেস কনফারেন্সের আয়োজক চার্লস অ্যান্ডারসন উপস্থিত সাংবাদিকদের আসন পেতে অর্থ প্রদান করতে বলেন। প্রথম সারির আসনের জন্য ধার্য করা হয় ১০০ পাউন্ড, আর অবারিত প্রশ্নের সুযোগ পেতে লাগে আরও ৫০ পাউন্ড। এমনকি, মঞ্চে উঠে "সাতোশি" নামে পরিচিত ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগের জন্য ৫০০ পাউন্ড খরচের প্রস্তাবও করা হয়।এতে সন্দেহ বেড়ে যায়।



অবশেষে ফ্রন্টলাইন ক্লাবে উপস্থিত হন মাত্র এক ডজন সাংবাদিক।উপস্থিত সকলেই ছিলেন সন্দিহান। পরবর্তীতে জানা যায়, আয়োজক এবং কথিত সাতোশি দুজনেই আইনি জটিলতায় রয়েছেন।রিপ্টোকারেন্সি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজেদের দাবির পক্ষে তারা নানা প্রতারণার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন।



এরপর স্টেজে হাজির হন একজন ব্যক্তি, স্টিফেন মোল্লাহ, যিনি দৃঢ়তার সাথে দাবি করেন, “আমি সাতোশি নাকামোটো এবং বিটকয়েন ব্লকচেইন প্রযুক্তি আমি তৈরি করেছি।



ঘণ্টাখানেক ধরে চলা ওই অনুষ্ঠানটি শেষ হয় যখন তিনি তার দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন।তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি প্রথম তৈরি হওয়া বিটকয়েনগুলো থেকে কয়েন বের করে দেখাবেন-যা একমাত্র আসল সাতোশিই করতে পারেন। কিন্তু তা করতেও ব্যর্থ হন।



এতে উপস্থিত সাংবাদিকরা হতাশা নিয়ে প্রেস কনফারেন্স ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।তাদের সবার মনেই এটি আরেকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা হিসেবে প্রতীয়মান হয়। 



নতুন কিছু নয়


সাতোশি নাকামোটো হিসেবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি পরিচিতি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।২০১৪ সালে নিউজউইকের এক উচ্চপ্রোফাইল প্রতিবেদনে ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা জাপানি-আমেরিকান ডোরিয়ান নাকামোটোকে সাতোশি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে তিনি তা অস্বীকার করেন এবং বিষয়টি একপ্রকার খারিজ হয়ে যায়।



এরপর ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান কম্পিউটার বিজ্ঞানী ক্রেইগ রাইটকে সাংবাদিকরা সাতোশি হিসেবে চিহ্নিত করেন।প্রথমে তিনি তা অস্বীকার করেন, পরে স্বীকার করে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন।এ বছরের বসন্তে লন্ডনের উচ্চ আদালত রায় দেন যে, মি. রাইট বিটকয়েনের আসল স্রষ্টা নন।



বহু ক্রিপ্টোপ্রেমী মনে করেন, সাতোশির পরিচয় অজানাই থাকা ভালো।রিপ্টোকারেন্সির অন্যতম ডেভেলপার অ্যাডাম ব্যাক বলেন, “কেউ জানে না সাতোশি কে, আর এটাই ভালো।” বিটকয়েন পডকাস্টার নাটালি ব্রুনেলের মতে, সাতোশির অজ্ঞাত পরিচয়ই বিটকয়েনকে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল না করে স্বাধীন একটি প্রযুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।



সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অধ্যাপক ক্যারল আলেক্সান্ডার মনে করেন, সাতোশি নাকামোটো কে, তা নিয়ে এত মাতামাতি আসলে ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রকৃত বিষয় থেকে মানুষের মনোযোগ সরিয়ে দেয়।



ফ্রন্টলাইন ক্লাব থেকে বেরিয়ে এসে পুরো ঘটনাটি যেন আরেকটি নতুন ব্যর্থ প্রচেষ্টা হয়ে থেকে যায়। সাতোশির প্রকৃত পরিচয় নিয়ে এই অনুসন্ধান হয়তো আর কখনোই সমাধান পাবে না।