২২ দিন পর রোববার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা। মধ্যরাত থেকেই জেলেরা মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। মা ইলিশ সংরক্ষণে প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে গত ২২ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল, যা রোববার শেষ হয়েছে। চাঁদপুরসহ দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। ফলে প্রায় ৫০ হাজার জেলে এই সময়ে কর্মহীন ছিলেন।
নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে সরকারি তালিকাভুক্ত ৪৪ হাজার জেলের জন্য খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এই চাল যথেষ্ট না হওয়ায় অন্যান্য খাদ্য, পরিবারের খরচ ও নৌকা মেরামত খরচ ধারদেনা করেই মেটাতে হয়েছে বলে জানান স্থানীয় জেলেরা।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালে কঠোর অবস্থানে ছিল নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ড। চাঁদপুরে কোস্ট গার্ড কমান্ডার লে. ফজলুল হক জানান, পদ্মা ও মেঘনায় কড়াকড়ি টহল দিয়ে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে, যার অংশ হিসেবে ৬০০ জেলেকে আটক করা হয়।
ইলিশ গবেষক ড. মোহাম্মদ আনিছুর রহমান জানান, অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহের ভরা পূর্ণিমা ও শেষের অমাবস্যায় রেকর্ড সংখ্যক মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। সাগরের নোনা পানি ছেড়ে ইলিশেরা নদীর মিঠা পানিতে ছুটে এসেছে। তবে তাদের পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে কি না তা জাটকার পরবর্তী বিচরণে বোঝা যাবে, যা নিয়ে গবেষণা চলছে।
দীর্ঘদিন পর মাছ ধরার সুযোগ পেয়ে জেলেরা উৎসাহিত এবং সমুদ্রযাত্রার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ নতুন করে জাল তৈরি করছেন, কেউ বরফ সংগ্রহ করছেন, আবার কেউ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করছেন। তাদের মুখে দেখা যাচ্ছে নতুন আশার আলো, যেন এবারের মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ আহরণ করে জীবন-জীবিকা এগিয়ে নিতে পারেন। পটুয়াখালীর বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে জেলেদের এই প্রস্তুতির প্রাণচঞ্চল দৃশ্য দেখা গেছে।
জেলেরা বলেন, আমরা আশা করছি, প্রশাসনের সহযোগিতায় এবার বাংলাদেশি জলসীমায় মাছ শিকার করা হবে। ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ না হলে আমাদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভালো হবে।
নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছেন, ফলে অনেক জেলেকে জরিমানা ও কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। এখন জেলেদের মধ্যে রয়েছে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়ার আশা। পায়রা বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, এবারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর জেলেরা গভীর সাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে এবং তারা সাগর থেকে প্রচুর ইলিশ আহরণের আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের অভিযানে ১৭ লাক্ষ ৫ হাজার ৯০০ মিটার জাল ও ২ হাজার ৭০০ ৩১ মেট্রিক টন মা ইলিশ জব্দ করেছে প্রশাসন। এছাড়া এ সময় ২৩৯টি মামলা ও একাধিক জেলেকে জেলে প্রেরন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১২ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার।