ঢাকা | বঙ্গাব্দ

পলকে উবে যাবেন ৬ লাখ মানুষ!

যে জায়গায় ‘বি৬১-১৩’-র বিস্ফোরণ ঘটবে, সেখানকার ৮০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা ছয় লক্ষ বাসিন্দা চোখের পলকে উবে যাবেন।
  • | ০৫ নভেম্বর, ২০২৪
পলকে উবে যাবেন ৬ লাখ মানুষ! ‘বি৬১-১৩’ পারমাণবিক বোমা।

আবারো পরমাণু বোমা তৈরি এবং তার পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কেন নতুন করে এই মারণাস্ত্র তৈরিতে নজর দিল ওয়াশিংটন? কারণ, দু’বছর পেরিয়ে গেলেও থামছে না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অন্য দিকে হামাস-হিজবুল্লাহ-হুথি ও ইরানের সঙ্গে একাধিক ফ্রন্টে লড়ছে ইসরায়েল। যার জেরে রক্তাক্ত পশ্চিম এশিয়া। 


এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন’ পরমাণু বোমা পরীক্ষার কথা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যা গত শতাব্দীর ‘শীতল যুদ্ধের’ (কোল্ড ওয়ার) সময়কার স্মৃতি ফেরাল বলে দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। নতুন এই বোমার শক্তি হবে হিরোশিমায় ফেলা বোমার ২৪ গুন বেশি। চোখের পলকেই নাই হয়ে যাবে ৬ লাখ মানুষ! গত বছরের ২৭ অক্টোবর নতুন করে অতি শক্তিশালী পরমাণু বোমা তৈরি এবং তা পরীক্ষার কথা ফলাও করে জানিয়ে দেয় ওয়াশিংটন। যার পোশাকি নাম ‘বি৬১-১৩’। 


যুক্তরাষ্ট্রর যাবতীয় পত্র-পত্রিকাগুলির দাবি, এবার যে বোমাটির পরীক্ষা করা হবে তা জাপানের হিরোশিমায় ফেলা বোমার চেয়ে ২৪ গুণ বড়। যদিও সেই পরীক্ষার দিনক্ষণ আটলান্টিকের পারের দেশটির প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনের তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি।


১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় পরমাণু হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। মানব ইতিহাসে সেটাই ছিল প্রথম আণবিক আক্রমণ। পেন্টাগনের বোমারু বিমান যে পরমাণু বোমাটি ওই জাপানি শহরের উপর ফেলে, তার সাঙ্কেতিক নাম ছিল ‘লিটল বয়’। এর তিন দিনের মাথায় ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে দ্বিতীয় আণবিক হামলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রর দ্বিতীয় পরমাণু বোমাটির নাম ছিল ‘ফ্যাট ম্যান’।


ওই আণবিক হামলার পর আত্মসমর্পণ করে জাপান। শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ওই সময়ে দু’টি পরমাণু হামলায় দেড় থেকে আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ‘লিটল বয়’ বা ‘ফ্যাট ম্যানের’ চেয়ে ২৪ গুণ বড় আণবিক বোমার ধ্বংসক্ষমতা যে অনেকটাই বেশি হবে, তা বলাই বাহুল্য। 


প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনুমান, যে জায়গায় ‘বি৬১-১৩’-র বিস্ফোরণ ঘটবে, সেখানকার ৮০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা ছ’লক্ষ বাসিন্দা চোখের পলকে উবে যাবেন। এ ছাড়া ওই ব্যাসার্ধের বাইরের দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সব স্থাপনা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। ফলে সেখানকার বাসিন্দাদেরও হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। পরমাণুর তেজস্ত্রিয়তা যত দূর ছড়িয়ে পড়বে, তত দূর পর্যন্ত প্রায় কেউই বেঁচে থাকবেন না। তার পরও যাদের জীবন রক্ষা পাবে, তারা ক্যানসারের মতো মারণরোগে আক্রান্ত হবেন।


পরমাণু শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে রাশিয়ার হাতেই রয়েছে সর্বাধিক আণবিক অস্ত্র। যার আনুমানিক সংখ্যা ৫ হাজার ৮৮৯টি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের অস্ত্রাগারে আছে ৫ হাজার ২২৪টি পারমাণবিক বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র। তা হলে নতুন করে কেন ‘বি৬১-১৩’ তৈরির প্রয়োজন হচ্ছে পেন্টাগনের? নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও গুপ্ত অভিসন্ধি?


ইসরায়েলের উপর গত বছরের ৭ অক্টোবর হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। যাতে প্রাণ হারায় ১,২০০ ইসরায়েলি। শুধু তা-ই নয়, বহু ইহুদিকে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। পাশাপাশি, ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালিয়েছে তেহরানও। এই পরিস্থিতিতে খোলাখুলি ভাবে ইসরায়েলের সমর্থনে রণাঙ্গনে প্রবেশ ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রর। 


ভূমধ্যসাগরের দিক থেকে ইহুদি ভূমিতে যাতে কোনো হামলা না হয়, সেজন্য সেখানে বিমানবাহী রণতরী ‘ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড’কে মোতায়েন করেছে পেন্টাগন। অন্য দিকে লোহিত সাগরের দিক থেকে হুথিদের হামলা ঠেকাতে সেখানে টহল দিচ্ছে ওয়াশিটনের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ। এ ছাড়াও ওই এলাকায় আরও চারটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।


তবে এভাবে খোলাখুলি ইহুদিদের পাশে দাঁড়ানোর ‘চরম মূল্য’ ইতিমধ্যেই দিতে হয়েছে ওয়াশিংটনকে। গত অক্টোবরে সিরিয়ায় মার্কিন সেনা ছাউনিতে এক সপ্তাহের মধ্যে ১৯টি হামলার ঘটনা ঘটে। যার নেপথ্যে হুথিদের হাত থাকার প্রমাণ মেলে। কয়েক দিনের মধ্যেই ইয়েমেনে হুথি অবস্থানে স্টেলথ ‘বি-২ স্পিরিট’ বোমারু বিমান দিয়ে প্রত্যাঘাত করে পেন্টাগন। ফলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বোমা তৈরিতে মন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 


কারণ, বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আণবিক হাতিয়ার তৈরির খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছে ইরান। শিয়া অধ্যুষিৎ এ মুসলিম দেশটি ওই মারণাস্ত্র তৈরি করে ফেললে ওয়াশিংটনের প্রায় সব শত্রুর অস্ত্রাগারেই শোভা পাবে পরমাণু হাতিয়ার। যার ফলে রাতের ঘুম হারাম পেন্টাগনের।


সমর বিশ্লেষকদের কথায়, রাশিয়া ও চীন- এই দুই শত্রুকে ঘিরেই সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথা যুক্তরাষ্ট্রর। সম্প্রতি ‘নিউক্লিয়ার পশ্চার রিভিউ’ নামের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ওয়াশিংটনের প্রতিরক্ষা দফতর। সেখানে বলা হয়েছে, মস্কো ও বেজিং গোপনে গোপনে এমন সব পরমাণু হাতিয়ার তৈরি করেছে, যা একসঙ্গে আঘাত হানলে বিশ্ব মানচিত্র থেকেই মুছে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে, কিছুটা বাধ্য হয়েই নাকি ‘আত্মরক্ষার্থে’ বি৬১-১৩ তৈরি এবং তার পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে হোয়াইট হাউস।