ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ব্লাড ক্যান্সার কেন হয়, বাঁচতে করণীয়

ব্লাড ক্যান্সার, যা রক্তের ক্যান্সার হিসেবে পরিচিত, রক্ত কোষ ও কোষ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যার কারণে ঘটে।
  • | ০৫ নভেম্বর, ২০২৪
ব্লাড ক্যান্সার কেন হয়, বাঁচতে করণীয় ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া (Leukemia) হল এক ধরনের ক্যান্সার। ফাইল ছবি

ব্লাড ক্যান্সার, যা রক্তের ক্যান্সার হিসেবে পরিচিত, রক্ত কোষ ও কোষ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যার কারণে ঘটে।এই রোগটি মূলত শরীরের রক্ত উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সেলগুলোতে বিকৃতি ঘটায়। ক্যান্সারের এই ধরনটি শরীরের লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা এবং মাল্টিপল মাইলোমা নামে তিনটি প্রধান ধরনের মাধ্যমে দেখা যায়।এই প্রতিবেদনে ব্লাড ক্যান্সারের কারণ, উপসর্গ, এবং বেঁচে থাকার জন্য করণীয় সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হবে।


ব্লাড ক্যান্সারের কারণ


ব্লাড ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোনও কারণ না থাকলেও কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণ রয়েছে যা রোগটির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে। ব্লাড ক্যান্সার মূলত রক্তের স্টেম কোষের জেনেটিক পরিবর্তনের কারণে ঘটে থাকে। কিছু কারণ নিম্নরূপ:


১. জেনেটিক মিউটেশন: বিভিন্ন রকমের মিউটেশন বা জেনেটিক পরিবর্তন রক্তের কোষকে ক্যান্সারাস হতে সাহায্য করে।



২. পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের কোনো সদস্যের ব্লাড ক্যান্সার থাকলে তার পরবর্তী প্রজন্মে রোগটির ঝুঁকি বেশি।


৩. তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ও রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ: ব্যঞ্জোল, আগ্রাসী ক্যামোথেরাপি, বা বিকিরণ সংস্পর্শে দীর্ঘ সময় থাকার কারণে এই রোগ হতে পারে।


৪. ভাইরাস সংক্রমণ: কিছু ভাইরাস যেমন হিউম্যান টি-সেল লিম্ফোট্রপিক ভাইরাস (HTLV-1) বা এইচআইভি ব্লাড ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।


৫. ইমিউন সিস্টেম দুর্বলতা: কিছু রোগ বা চিকিৎসার ফলে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে ব্লাড ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ে।



ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ


প্রাথমিক পর্যায়ে ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো নির্দিষ্ট নয়, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা পরবর্তীতে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। যেমন:


- অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা


- বারবার সংক্রমণ


- ওজন কমে যাওয়া


- শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা, বিশেষত হাড় এবং পেশিতে


- অস্বাভাবিক ব্লিডিং বা রক্তপাত


- লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া


- রক্তস্বল্পতা 


ব্লাড ক্যান্সারের নির্ণয়


ব্লাড ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। বিশেষজ্ঞরা সাধারণত নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলি পরামর্শ দেন:


১. রক্ত পরীক্ষা (Complete Blood Count): রক্তের কোষের সংখ্যা এবং মান পরিমাপের মাধ্যমে ক্যান্সার পরীক্ষা করা হয়।


২. বোন ম্যারো বায়োপসি: ক্যান্সারের অস্তিত্ব এবং ধরন নির্ধারণের জন্য হাড়ের মজ্জার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়।


৩. ইমেজিং টেস্ট: যেমন সিটি স্ক্যান, এমআরআই এবং এক্স-রে ক্যান্সার কোথায় ছড়িয়েছে তা নির্ণয় করতে সাহায্য করে।


ব্লাড ক্যান্সারে বেঁচে থাকার জন্য করণীয় 


ব্লাড ক্যান্সার হলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারার পরিবর্তন রোগীকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো মেনে চললে ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যেতে পারে:


১. ক্যামোথেরাপি: ব্লাড ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে ক্যামোথেরাপি প্রায়শই ব্যবহৃত হয়।


২. রেডিয়েশন থেরাপি: শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে রেডিয়েশন প্রয়োগ করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।


৩. স্টেম সেল থেরাপি: রোগীর বা দাতা থেকে সংগৃহীত স্টেম সেল দিয়ে আক্রান্ত রক্ত কোষ প্রতিস্থাপন করা হয়।


৪. ইমিউন থেরাপি: ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে ইমিউন থেরাপি ব্যবহার করা হয়, যা ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা


প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও, কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।



স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ: খাদ্যতালিকায় প্রচুর সবজি, ফলমূল এবং প্রোটিন রাখুন।


বদ অভ্যাস পরিহার: তামাক, মদ্যপান এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান পরিহার করা উচিত।


নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।


চিকিৎসকের পরামর্শ


বিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনো ধরনের ক্যান্সার সম্পর্কে আগেভাগে সতর্কতা অবলম্বন এবং নিয়মিত চিকিৎসা করালে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডাঃ শফিক আহমেদ, হেমাটোলজিস্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বলেন: “ব্লাড ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গগুলোকে অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করতে হবে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে ক্যান্সারের অগ্রগতি ধীর হয়ে আসে এবং জীবনযাপন অনেক সহজ হয়।


ব্লাড ক্যান্সার, যদিও ভীতিকর মনে হতে পারে, তবে সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।