ঢাকা | বঙ্গাব্দ

গাজা যুদ্ধেই কি কমলার ভরাডুবি?

কমলা হ্যারিস যে নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন না, এই বিষয়টি সেপ্টেম্বরেই নিউজউইককে জানিয়েছেন জিল স্টেইন।
  • | ০৭ নভেম্বর, ২০২৪
গাজা যুদ্ধেই কি কমলার ভরাডুবি? কমলা হ্যারিস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। নির্বাচনের আগে হওয়া বিভিন্ন জরিপের ফলও ছিল কমলা হ্যারিসের পক্ষে। কিন্তু নির্বাচনে সব জরিপ ভুল প্রমাণিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও কমলা হ্যারিসের এই ভরাডুবির কারণ হিসবে সামনে এসেছে বেশ কয়েকটি বিষয়। তবে এসবের মধ্যে গাজা ইস্যুই মূল কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।


প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সুইং স্টেটখ্যাত সাত রাজ্যের ফলাফলই এক্ষেত্রে বেশ মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে। ইতোমধ্যে সাতটির মধ্যে চারটিতেই জয় পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই চার রাজ্য হলো পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া ও উইসকনসিন।


বাকি তিন রাজ্যের মধ্যে মিশিগানের সবচেয়ে বড় মুসলিম শহর হিসেবে পরিচিত ডিয়ারবর্নের আরব আমেরিকানদের সমর্থনও পেয়েছেন ট্রাম্প। অনানুষ্ঠানিক ফলাফল অনুসারে, শহরে কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২৮ শতাংশ ভোট এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪৭ শতাংশ। এছাড়া এখানে গ্রিন পার্টির জিল স্টাইন ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। রাজ্যের রয়েছে ১৫টি ইলেক্টোরাল ভোট। মিশিগানের চূড়ান্ত ভোট গণনা এখনও শেষ হয়নি। তারপরও রাজ্যটিতে জয়ের ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত ট্রাম্প।


প্রাথমিক ফলাফলে বোঝা যাচ্ছে, ডিয়ারবর্নে ভোটাররা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছেন। আর এটি ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপের প্রতি স্পষ্ট প্রতিবাদ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।


মিশিগানের এই শহরের ভোটাররা গাজা যুদ্ধের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে বরাবরই অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন। যদিও কমলা হ্যারিস জয়ী হলে গাজা যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি তার অব্যাহত সমর্থন এবং ইসরায়েলে বারবার যুদ্ধাস্ত্র পাঠানোকে ভালোভাবে নেননি আরব-আমেরিকান ও মুসলিম ভোটাররা।


এমনকি কমলা হ্যারিস যে নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন না, এই বিষয়টি সেপ্টেম্বরেই নিউজউইককে জানিয়েছেন জিল স্টেইন। কারণ হিসেবে তিনি ‘গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে কমলার মুসলিম ও আরব-আমেরিকানদের সমর্থন’ হারানোর বিষয়টিতে জোর দেন।


নির্বাচনের দিন মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাতে ডেট্রয়েট মার্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক খালেদ বেইদুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে জানান, ‘কমলা হ্যারিসের মিশিগান হারানোর কারণ হতে পারে মুসলিম ভোট।’ সংবাদমাধ্যম ‘জেটিও নিউজ’-এর প্রধান সম্পাদক ও বিশ্লেষক মেহদি হাসান বলেন, ‘মিশিগানে মুসলিম ভোটারদের অনুভূতি উপেক্ষা করাটা ডেমোক্র্যাটদের জন্য বিপজ্জনক ভুল ছিল।’


কারণ, অনেক আরব আমেরিকান মনে করেন, ট্রাম্প পরিবর্তন আনতে পারবেন। আর সেই বিশ্বাসই প্রতিধ্বনিত হলো ফিলিস্তিনি আমেরিকান নাবিল হামামেহর কণ্ঠেও। আরব আমেরিকানরা ট্রাম্পের সমর্থনে পার্টি দিয়েছিলেন। সেই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন হামামেহ। মিডল ইস্ট আইকে তিনি বলেন, দেশের পরিবর্তন দরকার এবং আমার মনে হয় ট্রাম্প সেই পরিবর্তন আনতে পারেন।


এইবার নির্বাচনে শহরের অনেক ভোটার প্রথমবারের মতো ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে হামামেহ সবসময়ই একজন রিপাবলিকান এবং তিনি বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো এবং তিনি নিশ্চয়ই ইসরায়েলি সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে আরও ভালো কাজ করবেন। এদিকে, অন্য দুই সুইং স্টেট অ্যারিজোনা ও নেভাদায়ও জয়ের সুবাতাস পাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।