ঢাকা | বঙ্গাব্দ

কিশোরী গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় ফের রিমান্ডে আদর

এর আগে ২০ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দিনাত জাহান আদরের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে ভাটারা থানা পুলিশ।
  • | ০৭ নভেম্বর, ২০২৪
কিশোরী গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় ফের রিমান্ডে আদর কিশোরী গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় দিনাত জাহান আদর ফের রিমান্ডে।

কিশোরী গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় দিনাত জাহান আদরকে দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।


বৃহস্পতিবার (০৭ নভেম্বর) এ আদেশ দেন আদালত।


সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় ওই কিশোরীকে। সারা শরীরে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার ভেঙে দেয়া হয়েছে চারটি দাঁত। কখনও রড, কখনও লাঠি দিয়ে পেটানো, আবার কখনও ছেঁকা দেয়া হতো শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এমনই পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় ১৩ বছর বয়সি কল্পনা নামে এক গৃহকর্মীর ওপর। পৈশাচিক নির্যাতন চালানো গৃহকর্ত্রী দিনাত জাহান আদরকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য জানা যায়।

 

এর আগে ২০ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দিনাত জাহান আদরের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে ভাটারা থানা পুলিশ। পরে আদালত তার এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

 

সরেজমিন ঢামেক হাসপাতালে দেখা যায়, চিকিৎসাধীন কল্পনার পায়ের নখ থেকে মাথার চুল, কোথাও বাদ নেই নিপীড়নের চিহ্নের। রেহাই পায়নি দাঁতগুলোও। ভেঙে ফেলা হয়েছে কাঠের টুকরো দিয়ে আঘাতে আঘাতে।

 

কল্পনা জানায়, দুয়েক দিন নয়; দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চলে তার ওপর এ পাশবিক নির্যাতন। রড দিয়ে পেটানো ছিল যেন দৈনন্দিন কাজ। সবশেষ দুদিন আগে হেয়ার স্ট্রেইটনার দিয়ে ছেঁকা দেয়া হয় মুখে। কাজের ভুল ধরে, কখনও মদ্যপ হয়ে গৃহকর্ত্রী দিনাত জাহান আদর তার ওপর চালাতেন এ পৈশাচিক বর্বরতা। চিকিৎসার জন্যও কখনও যেতে দেয়া হতো না বাসার বাইরে।

 

শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে এক গণমাধ্যমকর্মীর খবরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই-ব্লকের, ৩ নম্বর রোডের ৪৬৬ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে মুমূর্ষু কল্পনাকে উদ্ধার করে ভাটারা থানা পুলিশ। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

 

জানা যায়, অভিযুক্ত দিনাত জাহান আদর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। বর্তমানে কিছুই করেন না। বাসায় এক ভাই ও বন্ধুরা আসেন মাঝে মাঝে। বাসার কেয়ারটেকার ও প্রতিবেশীরা বলছেন, নির্যাতনের বিষয়ে তারা কিছুই টের পাননি।

 

কল্পনার মা আফিয়া বেগম বলেন, মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতনে পাঁচ বছর আগে কল্পনাকে দিনাত জাহানের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে দিই। বহুবার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি, কিন্তু দেখা করতে দেয়নি। কয়েক মাস পরপর ফোনে কথা বলতে দিলেও কল্পনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকত গৃহকর্ত্রী দিনাত জাহান।

 

কল্পনার শরীরের এত জখম দেখে আঁতকে ওঠেন খোদ চিকিৎসকরাও। তারা বলছেন, শরীরের জখমে ইনফেকশনের সঙ্গে রয়েছে ট্রমাও। সেরে উঠতে কল্পনার প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা।

 

ঢাকা মেডিকেলে কল্পনাকে দেখার পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দেশের আনুমানিক ৫ লাখ শিশুশ্রমিক ও গৃহকর্মীর নিরাপত্তায় প্রয়োজন আইন। এ জন্য একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।