ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদির লেখা বিতর্কিত উপন্যাস 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছে দিল্লি হাইকোর্ট। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি শুক্রবার (৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরোজ্যের দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়া রুশদির জন্ম ভারতে হলেও দেশটিতে ১৯৮৮ সালে তার এই বইটি প্রকাশের অল্প সময় পরই নিষিদ্ধ করা হয়। এ সপ্তাহে দিল্লির হাইকোর্টে এক মামলার রায়ে এই নিষেধাজ্ঞা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে।
২০১৯ সালে সন্দীপন খান নামে একজন ওই বইটি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার আবেদন জানান। দিল্লি হাইকোর্টে মামলাটি ওঠার পর রিট করে এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বইটির আমদানি ও প্রকাশ নিষিদ্ধ করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার যে বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা গায়েব হয়ে গেছে। ফলে হাইকোর্ট অন্য কোনও যুক্তি শুনতে চায়নি।
হাইকোর্টের দুই বিচারপতি রেখা পাল্লি এবং সৌরভ ব্যানার্জি এক রায় দিয়ে বলেছেন, যেহেতু ওই বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া যাচ্ছে না, তাই আমরা ধরে নিচ্ছি এই ধরনের কোনও বিজ্ঞপ্তি ছিলই না। তাই ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ আমদানি করতে কোনও বাধা নেই। এ সম্পর্কে বিভিন্ন মুসলিম বিদগ্ধ ব্যক্তি ও সংগঠন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আইনজীবীরাও। ১৯৮৮ সালের সেপ্টেম্বরে তার বিতর্কিত স্যাটানিক ভার্সেস বইটি বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় তোলে। তার এ লেখার প্রতিবাদে গোটা মুসলিম বিশ্বে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ১৯৮৯ সালে এক ফতোয়ার মাধ্যমে রুশদিকে মৃত্যুদণ্ড দেন এবং তাকে হত্যা করার জন্য সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান। রুশদির মাথার জন্য ২৮ লাখ মার্কিন ডলারের পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণার পর ব্রিটিশ সরকার তাকে সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারায় রাখে।
রুশদি নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য প্রথম ছয় মাসে অন্তত ৫৬ বার নিজের বাসভবন ও ঠিকানা পরিবর্তন করে এবং ২০০২ সাল অর্থাৎ ১৩ বছর পর্যন্ত লোকচক্ষুর অন্তরালে গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। ২০২২ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার সময় হামলার শিকার হন রুশদি। এই হামলায় তিনি একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান।