অপরাধীর ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভারতের জনগণের বিবাদ শেষ পর্যন্ত গড়ালো দেশটির সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত। ‘বুলডোজার নীতি’ নিয়ে বুধবার রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। কোনো ব্যক্তি অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে বুলডোজার দিয়ে তার বাড়ি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মামলা দায়ের হয় শীর্ষ আদালতে। বুধবার সেই মামলাতেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল, এখন থেকে ঘরবাড়ি ও অন্য ‘অবৈধ’ কাঠামো ভাঙতে গেলেও তা করতে হবে নির্দিষ্ট নিয়মবিধি মেনেই।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে বুলডোজার মামলার রায় শোনায় বিচারপতি বিআর গভই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ। বুধবার বিচারপতি গভই বলেন, আমরা বাসস্থানের অধিকারের দিকটি গুরুত্ব সহকারে দেখেছি। সংবিধানের ১৯ এবং ২১তম অনুচ্ছেদেও এর উল্লেখ রয়েছে। বাসস্থানের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। এই ধরনের অধিকার থেকে নিরপরাধ মানুষকে বঞ্চিত করা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক।
বিচারপতির মতে, যখন কোনো নির্দিষ্ট বাড়ি কিংবা কাঠামো হঠাৎ করে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অথচ অন্য কাঠামোগুলিকে রেয়াত করা হয়- তখন ধরে নেওয়া যেতে পারে যে এই কাজটি বেআইনি নির্মাণে বাধা দিতে নয় বরং আইনের ঊর্ধ্বে উঠে কোনো ব্যক্তিবিশেষকে শাস্তি দেওয়ার জন্যই করা হয়েছে। গভই বলেন, এই ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার মেনে নেওয়া যায় না। কোনো ব্যক্তি বিচার করতে পারেন না, কে দোষী আর কে দোষী নয়। কেউ এভাবে আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না।
এর পরেই দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, আগে থেকে শোকজ় নোটিস ছাড়া কোনও কাঠামো ভেঙে ফেলা যাবে না। নোটিস পাঠানোর পর ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। তার পর বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হবে। জেলা প্রশাসকের নিয়োগ করা অফিসারের তত্ত্বাবধানে ভাঙার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। এ বিযয়ে সংবিধানের ১৪২ ধারা অনুযায়ী নির্দেশিকাও জারি করেছে শীর্ষ আদালত। ‘বুলডোজার নীতি’ নিয়ে আগেও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলায় ১ অক্টোবর অন্তর্বতী আদেশের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়ে বিচারপতি গভই এবং বিচারপতি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কোনো বাড়ি কিংবা দোকান বুলডোজা দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
দেশের বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, বিজেপি এবং তাদের শরিক দল পরিচালিত রাজ্য সরকারগুলি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ‘অভিযুক্ত’দের বাড়ি। উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসনের এই ধরনের কাজের জন্য সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কেউ কেউ ‘বুলডোজার বাবা’ বলেও সম্বোধন করে থাকেন। যদিও বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, বেছে বেছে কেবল এমন বাড়িগুলিকেই নিশানা করা হচ্ছে, যে বাড়ির বাসিন্দারা রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির সমর্থক নন।