ঢাকা | বঙ্গাব্দ

জুমার দিনের বিশেষ তাৎপর্য ও করণীয়

  • | ২৯ নভেম্বর, ২০২৪
জুমার দিনের বিশেষ তাৎপর্য ও করণীয় ফাইল ছবি

জুমার নামাজ মুসলিমদের জন্য এক বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে জুমার দিনকে ঈদের দিনের মতো মর্যাদাপূর্ণ মনে করা হয়। কুরআন এবং হাদিসে জুমার দিনের বিশেষ তাৎপর্য ও করণীয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে। এখানে জুমার নামাজের আগে করণীয় বিষয়গুলো ও তার ফজিলত তুলে ধরা হলো:



জুমার দিনের তাৎপর্য

পবিত্র কুরআনে জুমার উল্লেখ: আল্লাহ তাআলা বলেন: হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো। — (সুরা জুমু'আহ, আয়াত: ৯)


হাদিসে জুমার গুরুত্ব: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: জুমার দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনে আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়, এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়।— (মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪)  


জুমার নামাজের আগে করণীয় কাজসমূহ

গোসল করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করবে, সুরমা লাগাবে এবং উত্তম পোশাক পরিধান করবে, তার জন্য জুমার নামাজে আগমন বরকতময় হবে। — (তিরমিজি, হাদিস: ৫০৭)


মিসওয়াক করা ও পরিচ্ছন্ন হওয়া: দাঁত পরিষ্কার করা ও নিজের শারীরিক পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। এতে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।


সুন্দর পোশাক পরিধান করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জুমার দিন তোমরা উত্তম পোশাক পরিধান কর।— (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৭৬)


খুশবু ব্যবহার করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) সুগন্ধি ব্যবহারকে জুমার দিনের আদর্শ হিসেবে নির্দেশ দিয়েছেন।


দু'আ ও দরুদ পাঠ: জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার নির্দেশনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। — (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৭)


সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলো প্রজ্বলিত থাকবে।— (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪)


তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: যে ব্যক্তি প্রথম ঘণ্টায় জুমার জন্য আসে, সে যেন একটি উট কুরবানির সওয়াব লাভ করল।— (বুখারি, হাদিস: ৮৮৩)


নফল নামাজ আদায় করা: মসজিদে গিয়ে নফল নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।


ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা: খুতবার সময় কথা বলা নিষেধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: যে ব্যক্তি খুতবার সময় কথা বলবে, তার জুমার সওয়াব নষ্ট হয়ে যাবে। — (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭)


জুমার দিনের ফজিলত

গুনাহ মোচনের সুযোগ: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জুমার একটি নামাজ থেকে পরবর্তী জুমার নামাজ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়, যদি বড় গুনাহ না করা হয়।— (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৩৩)


দু'আ কবুলের সময়: জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যখন মুমিনদের প্রত্যেক প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: জুমার দিনে একটি বিশেষ সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে, আল্লাহ তা কবুল করেন।— (বুখারি, হাদিস: ৯৩৫)


জুমার দিনকে মর্যাদা দিয়ে পালন করা এবং নামাজের আগে সুন্নতসমূহ পালন করা আল্লাহর বিশেষ রহমত ও বরকত লাভের উপায়। এই দিনটি ইবাদত, তাওবা ও দু'আর জন্য সর্বোত্তম। আল্লাহ আমাদের সকলকে জুমার দিনের ফজিলত বোঝার এবং তা যথাযথভাবে পালনের তাওফিক দিন। 


আমিন।