ঢাকা | বঙ্গাব্দ

আজ বিশ্ব এইডস দিবস

আজ, ১ ডিসেম্বর। বিশ্ব এইডস দিবস।
  • | ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪
আজ বিশ্ব এইডস দিবস বিশ্ব এইডস দিবস

আজ, ১ ডিসেম্বর। বিশ্ব এইডস দিবস।এটি এমন একটি দিন, যখন আমরা এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে, আক্রান্তদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে এবং এই রোগের বিস্তার প্রতিরোধে কাজ করি। এই বছর বিশ্ব এইডস দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো "সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করুন," যার লক্ষ্য হলো এই রোগ প্রতিরোধে সকলের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।


কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ইউনিসেফ-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, কিছু নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এই জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রয়েছে:


যৌনকর্মীরা: নিরাপদ সুরক্ষার অভাব এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করানো এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।


সমকামী এবং উভকামী পুরুষেরা: এই গোষ্ঠীটি বিশ্বব্যাপী এইচআইভি সংক্রমণের উচ্চ হারে আক্রান্ত।


ইনজেকশন ড্রাগ ব্যবহারকারীরা: একই সিরিঞ্জ ব্যবহার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।


ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি: সামাজিক বৈষম্য এবং স্বাস্থ্যসেবার অভাবে তারা প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।


কিশোর-কিশোরী এবং যুবসমাজ: বিশেষ করে যেসব দেশে যৌন শিক্ষা এবং সচেতনতার অভাব রয়েছে।


রোগের প্রাথমিক লক্ষণ


- এইচআইভি সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:


- জ্বর, ক্লান্তি এবং সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ।


- লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।


- গলা ব্যথা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি।


এই উপসর্গগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে অন্যান্য সাধারণ রোগের মতো মনে হতে পারে। তাই সময়মতো পরীক্ষা করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


প্রতিকার ও প্রতিরোধ


প্রতিরোধের উপায়:


- নিরাপদ যৌন সম্পর্ক: কনডম ব্যবহার নিশ্চিত করুন।


- রক্ত পরীক্ষা করা: রক্ত সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে রক্তদান বা গ্রহণের আগে পরীক্ষা করানো উচিত।


- যৌন শিক্ষা প্রচার: বিশেষত কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।


- সুই এবং সিরিঞ্জের সুরক্ষা: ইনজেকশন ড্রাগ ব্যবহারকারীদের মধ্যে একবার ব্যবহার করা সিরিঞ্জ পুনরায় ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া।


চিকিৎসা:


- অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি (ART): এই চিকিৎসা পদ্ধতি এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ভাইরাসের বৃদ্ধি কমায় এবং রোগীর জীবনকাল দীর্ঘায়িত করে।


- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: সংক্রমণ দ্রুত শনাক্ত করতে সাহায্য করে।


চিকিৎসকদের পরামর্শ


বিশেষজ্ঞদের মতে, এইডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সচেতনতা বৃদ্ধি। ঢাকার একজন চিকিৎসক, ডা. শামীম আহমেদ বলেন, "এইচআইভি সংক্রমণ রোধে সঠিক তথ্য প্রচার, নিরাপদ সুরক্ষা এবং মানসিক সমর্থন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।" তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে তাদেরকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার পাশাপাশি সমাজে তাদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে হবে।


বর্তমান পরিস্থিতির তথ্য (২০২৩):


বিশ্বব্যাপী পরিসংখ্যান: প্রায় ৩৯.০ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে এইচআইভি সংক্রমিত। নতুন সংক্রমণের হার প্রতি বছর প্রায় ১.৩ মিলিয়ন।


বাংলাদেশের পরিসংখ্যান: জাতীয় এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ১৪,০০০ মানুষ এইচআইভি সংক্রমিত। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।


আক্রান্তদের মধ্যে ৮৫% রোগী নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।


এইচআইভি/এইডস একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা প্রতিরোধযোগ্য এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য। সচেতনতা বাড়ানো, সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাবই এই রোগের বিস্তার রোধ করতে পারে।