ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের বোমার চালান আটকে দেওয়ার মূল কারণ কী

এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে টেলিফোনে হুমকি দেন, যদি ইসরায়েল গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে না দেয়, তাহলে তারা তাদের সামরিক সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে দেবেন।
  • | ০৮ মে, ২০২৪
ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের বোমার চালান আটকে দেওয়ার মূল কারণ কী মার্কিন বোমার চালান স্থগিতের পেছনে রয়েছে একাধিক সমীকরণ

ইসরায়েলকে কথা শোনাতে বাধ্য করতে যে দেশটির সামর্থ্য রয়েছে সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্র। তবে হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যেসব নির্দেশনা দিয়েছে সেগুলোর প্রায় সবই উপেক্ষা করেছে ইসরায়েল।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি তাদের দৃঢ় সমর্থন রয়েছে। তবে গাজার রাফাতে, যেখানে প্রায় ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন, সেখানে বড় হামলা না চালাতে ইসরায়েলকে বারবার নিষেধ করেছে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু এই নিষেধ অগ্রাহ্য করেছে দখলদাররা।

তবে সাত মাস পর যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করা শুরু করেছে। তারা গোপনে ইসরায়েলকে সতর্কতা দিয়েছে। প্রকাশ্যে সতর্কতা দিয়েছে। তারা জাতিসংঘে ইসরায়েলকে নিন্দা করা প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং পশ্চিমতীরে অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে টেলিফোনে হুমকি দেন, যদি ইসরায়েল গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে না দেয়, তাহলে তারা তাদের সামরিক সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে দেবেন।

তবে এসব হুমকি-ধামকিকে কোনো পাত্তাই দেয়নি ইসরায়েল। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা ইসরায়েলে একটি বোমার চালান আটকে দিয়েছে।

বাইডেন প্রশাসন আরও জানিয়েছে, ডাম্ব বোমাকে নির্ভুল বোমায় পরিণত করতে যে কিট রয়েছে সেগুলোও ইসরায়েলকে এখন দেওয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে।

তবে কেন যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে এমন সিদ্ধান্ত নিলো? এটির ভেতরের কারণ কী?

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক বিশ্লেষণে জানিয়েছে, এটির প্রথম উত্তর হলো— যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা যদি গাজার রাফাহতে ইসরায়েল পূর্ণমাত্রার সামরিক হামলা চালায় তাহলে অসংখ্য বেসামরিক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাতে পারেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা বোমার যে চালানটি আটকে দিয়েছেন সেগুলো রাফাহতে ব্যবহার করা হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে চালানটি আটকে দেওয়া হয়েছে। তাদের কথা হলো, রাফাহর মতো একটি জনবহুল এলাকায় এসব বোমা ছোড়া হলে সাধারণ মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবেন।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, বোমার চালান আটকে দেওয়ার অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ‘সতর্কতা’ দিয়েছে। রাফাহতে হামলা না চালানোর ব্যাপারে তারা কতটা সিরিয়াস সেটি বুঝিয়েছে।

দ্বিতীয় উত্তর হলো— হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র চাপে রাখতে চায়। বর্তমানে মিসরের রাজধানী কায়রোতে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে। যদি ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয় তাহলে তাদের ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে চায় ওয়াশিংটন।

তৃতীয় উত্তর হলো— মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রাজনীতির হিসাব-নিকাশ। তারা ভয় পাচ্ছে, ইসরায়েলকে অব্যাহতভাবে সমর্থন জানানোয় তরুণ ডেমোক্র্যাটরা আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে আসবেন না। আর তারা না আসলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেনের জয় কঠিন হয়ে পড়বে।

তবে বোমার চালান আটকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ঝুঁকিও নিয়েছে। কারণ ইসরায়েল চাইলে এখনো তাদের কথা উপেক্ষা করতে পারে। কারণ ইসরায়েলের বিশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘকালীন সামরিক সহায়তা অব্যাহত থাকবেই। এতে করে অবশ্য বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। কারণ তখন অনেকেই মনে করবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে গেছে।

তবে সবশেষ উত্তর হলো যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের একমাত্র অস্ত্র সরবরাহকারী নয়। যদি যুক্তরাষ্ট্র বোমার চালান আটকে রাখে তাহলে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশও একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

সূত্র: বিবিসি