ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের অভিযোগ নতুন নয়। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি বহুবার আন্তর্জাতিক মহলে এই ধরনের অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে উত্তরপ্রদেশে এবার ভেঙে দেওয়া হলো একটি প্রাচীন মসজিদের অংশ। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো নূরী জামে মসজিদের এই অংশটি স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফতেহপুর জেলার এই মসজিদের একাংশকে অবৈধ নির্মাণ হিসেবে দাবি করে প্রশাসন। স্থানীয় পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউডি) জানায়, বান্দা-বাহরাইচ হাইওয়ের ওপর থাকা মসজিদের অংশটি সরানোর জন্য গত ১৭ আগস্ট একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।
কর্তৃপক্ষের দাবি, মসজিদ কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবৈধ অংশটি না সরানোয় গণপূর্ত বিভাগ সেটি ভেঙে ফেলে। যদিও মসজিদ কমিটি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা করেছিল। তবে প্রশাসন দাবি করে, আদালতে আবেদন জমা পড়লেও তা শুনানির জন্য নথিভুক্ত হয়নি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অবিনাশ ত্রিপাঠি বলেন, মসজিদের যে অংশটি ভাঙা হয়েছে তা তিন বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আগেই নির্দেশ দিয়েছিল যে, বিচারবিভাগীয় অনুমতি ছাড়া কোনো স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে ভাঙা যাবে না। তা সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশসহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বুলডোজার ব্যবহার করে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
সম্প্রতি, উত্তরপ্রদেশের সামভালে মুঘল আমলের আরেকটি মসজিদ নিয়ে বিতর্কে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। শাহী জামা মসজিদকে ঘিরে স্থানীয় জনতা ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত এবং বহু আহত হন। হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর দাবি, প্রাচীন একটি হিন্দু মন্দিরের ওপর ভিত্তি করেই এই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল।
ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ বাড়ছে। ২০২৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র সফরে নরেন্দ্র মোদি এ বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, মুসলিমদের অধিকার সুরক্ষিত না করলে ভারত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক প্রতিবেদনে ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নির্যাতনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ভারতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও। এই ঘটনায় উত্তরপ্রদেশসহ পুরো ভারতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। নূরী জামে মসজিদের অংশ ভাঙার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
thebgbd.com/NIT