ঢাকা | বঙ্গাব্দ

শেখ পরিবারের সিনেমা বানাতেই ৫৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প

শেখ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ১০টি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল, যার মোট বাজেট ধরা হয়েছিল ৫৭৪ কোটি টাকা।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
শেখ পরিবারের সিনেমা বানাতেই ৫৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প শেখ হাসিনা।

শেখ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ১০টি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল, যার মোট বাজেট ধরা হয়েছিল ৫৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৭৮ কোটি টাকা চলচ্চিত্র নির্মাণে এবং বাকি ১৯৬ কোটি টাকা তদারকি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে ব্যয় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এই প্রকল্পটি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রস্তাবিত ভবিষ্যৎ প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।


তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলচ্চিত্র নির্মাণের দায়িত্ব তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের হলেও তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কেন এই দায়িত্ব নিয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিশেষ আগ্রহেই এই প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছিল বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের মতে, সরকারের উচ্চপর্যায়কে খুশি করে আর্থিক দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করতেই এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।


অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিগত সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি তদন্তের জন্য সাত সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়, যার নেতৃত্বে আছেন একজন অতিরিক্ত সচিব। তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের তথ্য পেয়েছে এবং ৮টি প্রকল্প বাতিল করেছে। আরও কিছু প্রকল্পে বাজেট কাটছাঁট করা হবে।


ব্যয় নিয়ে বিতর্কতদন্ত কমিটির প্রধান মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, শেখ পরিবারের ওপর নির্মিতব্য চলচ্চিত্র প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশের সিনেমার সাধারণ ব্যয়ের তুলনায় এত বিশাল অঙ্কের অর্থ কীভাবে বরাদ্দ করা হলো। সাধারণত বাংলাদেশের একটি চলচ্চিত্রে ১ কোটি টাকার কমে কাজ শেষ হয়। সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল চলচ্চিত্রগুলোর বাজেট ৪-৫ কোটি টাকার মধ্যে থাকে।


তথ্য অনুযায়ী, ১০টি চলচ্চিত্রের জন্য গড়ে ৫ কোটি টাকা খরচ হলে মোট খরচ দাঁড়ায় ৫০ কোটি টাকা। এমনকি যদি বাজেট দ্বিগুণ হয়, তবুও তা ১০০ কোটির বেশি হওয়ার কথা নয়। তাহলে বাকি ৪৭৪ কোটি টাকা কোন খাতে খরচ হতো, এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রকল্পগুলো তৎকালীন সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে গ্রহণ করা হয়েছিল, যার ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকৃত তথ্য জানেন না বা জানাতে অনিচ্ছুক।


চলচ্চিত্র পরিচালক এস এ হক অলিকের মতে, বাংলাদেশের সিনেমা নির্মাণে সাধারণত বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন হয় না। তিনি উল্লেখ করেন যে, প্রিয়তমা এবং রাজকুমার নামে দুটি ব্যয়বহুল ছবির বাজেটও ছিল ৪-৫ কোটি টাকার মধ্যে। এমন প্রেক্ষাপটে শেখ পরিবারের উপর নির্মাণাধীন প্রকল্পের এত বড় বাজেট যৌক্তিক নয়।


thebgbd.com/NIT