ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সীমান্ত বেদখল হলেও রাজধানীতে ‘সুরক্ষিত’ জান্তা

মায়ানমারের রাজধানীসহ বড় জনপদগুলিতে মূলত সংখ্যাগুরু বামার জনগোষ্ঠীর বাস। এবং তাদের বড় অংশ জান্তার সমর্থক।
  • অনলাইন ডেস্ক | ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
সীমান্ত বেদখল হলেও রাজধানীতে ‘সুরক্ষিত’ জান্তা মায়ানমারের জান্তা প্রধান মিন আউং হ্লাইং।

ক্ষমতা দখলের চতুর্থ বর্ষপূর্তির জন্য অপেক্ষা আর মাত্র দু্ইমাসের। কিন্তু বিদ্রোহী জোটের ধারাবাহিক অগ্রগতিতে ইতিমধ্যেই বেসামাল মায়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে প্রতিবেশি থাইল্যান্ড এবং চীন সীমান্তবর্তী এলাকার বড় অংশ আগেই নিয়ন্ত্রণে নেয় বিদ্রোহী জোট। এ বার মাউংড, বুডিথং, পালেতওয়া-সহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অধিকাংশ এলাকাই বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে।


বিদ্রোহীদের ধারাবাহিক হামলার জেরে জান্তা সেনার গতিবিধি এখন রাজধানী নেপিডো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন এবং আরও কিছু বড় জনপদ-শিল্পাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। কিন্তু বিদ্রোহী জোট সেই এলাকাগুলি দখল করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাদের যুক্তি, মায়ানমারের রাজধানীসহ বড় জনপদগুলিতে মূলত সংখ্যাগুরু বামার জনগোষ্ঠীর বাস। এবং তাদের বড় অংশ জান্তার সমর্থক। প্রভাবশালী বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও এখনও জান্তার পাশে রয়েছেন। অন্য দিকে, মূলত প্রান্তিক এলাকার শান, কারেনের মতো জনজাতি গোষ্ঠীগুলি রয়েছে বিদ্রোহীদের জোটে।


তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে একদা জান্তার ‘চক্ষুশূল’ রোহিঙ্গা মুসলিমরাও এখন সরকারি বাহিনীর সহযোগী! আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) যোদ্ধারা গত ছয় মাস বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় জান্তাসেনার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়েছে। যদিও তাতে ‘শেষরক্ষা’ হয়নি। 


২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ক্ষমতাসীন অং সান সু চির দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’ নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করে মায়ানমার সেনা। শুরু হয় সামরিক জান্তার শাসন। তার আড়াই বছরের মাথায় নভেম্বর থেকে সে দেশের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নয়া জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।


ওই যুদ্ধের পোশাকি নাম ‘অপারেশন ১০২৭’। পরবর্তী সময়ে জান্তা-বিরোধী যুদ্ধে শামিল হয় ‘চীন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কোচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ) এবং সু চির সমর্থক স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’-এর সশস্ত্র বাহিনী ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’ (পিডিএফ)। মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’, জান্তা বিরোধী রাজনৈতিক দল ‘শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি’ এবং তাদের সশস্ত্র শাখা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির প্রতি সমর্থন জানায়।


বিদ্রোহীদের মদতপুষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠী ‘ইউনাইটেড ওয়া স্টেট পার্টি’ (ইউডব্লিউএসপি) কয়েকটি প্রদেশে সমান্তরাল সরকার চালানো শুরু করে দিয়েছে। থাইল্যান্ডে নির্বাসিত মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নাগরিকদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ‘ইরাবতী’ খোলাখুলি বিদ্রোহীদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। দক্ষিণ রাখাইনের গাওয়া, তাউনগুপ এবং আন শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে এখন সরকারি সেনার সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে বিদ্রোহী বাহিনীর। বিদ্রোহী জোটের তরফে জান্তা সেনার উপর হামলা চালাতে ‘ব্রিগেড ৬১১’ নামে একটি বাহিনী গঠন করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জনজাতিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ওই বাহিনী। আরাকান আর্মির পাশাপাশি তারা এই মুহূর্তে রয়েছে লড়াইয়ের প্রথম সারিতে।


সূত্র: সিনহুয়া


এসজেড