ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ই-সিগারেট: স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর?

-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেট বর্তমানে ধূমপানের বিকল্প হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
  • | ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
ই-সিগারেট: স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর? সিগারেটের চেয়ে ক্ষতিকর ই-সিগারেট

-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেট বর্তমানে ধূমপানের বিকল্প হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মূলত ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগে সহায়তা করার জন্য এটি বাজারে আসে। তবে ই-সিগারেটের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।


ই-সিগারেট কী?


ই-সিগারেট একটি ব্যাটারিচালিত ডিভাইস, যা তরল নিকোটিন বা ফ্লেভারযুক্ত ই-লিকুইড গরম করে বাষ্প তৈরি করে। এই বাষ্প শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়।


ই-সিগারেটের মূল উপাদান


নিকোটিন: আসক্তি তৈরি করে এবং হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।


প্রোপিলিন গ্লাইকল ও ভেজিটেবল গ্লিসারিন: বাষ্প তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক।


ফ্লেভারিং এজেন্ট: বিভিন্ন স্বাদ যুক্ত করতে ব্যবহৃত।


অন্যান্য রাসায়নিক: যেগুলো বাষ্প তৈরির সময় ভেঙে বিষাক্ত উপাদান তৈরি করতে পারে।


ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব


১. নিকোটিন আসক্তি: ই-সিগারেটেও নিকোটিন থাকে, যা আসক্তি তৈরি করে। এটি ধূমপান ছাড়ার পরিবর্তে নিকোটিনের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ায়।


২. ফুসফুসের সমস্যা: ই-লিকুইড বাষ্পের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে, যা শ্বাসযন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি ই-সিগারেট বা ভেপিং অ্যাসোসিয়েটেড লাং ইনজুরি (EVALI) নামে পরিচিত জটিলতা তৈরি করতে পারে।


৩. হার্টের সমস্যা: ই-সিগারেটে থাকা নিকোটিন রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা ব্যাহত করতে পারে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।


৪. ক্যানসারের ঝুঁকি: ই-সিগারেটের তাপ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ফরমালডিহাইড, অ্যাসিটালডিহাইড এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক তৈরি হতে পারে, যা ক্যানসার সৃষ্টিকারী।


৫. শিশু ও কিশোরদের জন্য ক্ষতিকর: ই-সিগারেটের বিভিন্ন ফ্লেভার শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করে। নিকোটিন তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে মনোযোগ ও শেখার ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।


৬. ই-লিকুইড বিষক্রিয়া: ই-লিকুইড ত্বক বা মুখে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়া হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।


৭. দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অজানা: ই-সিগারেট অপেক্ষাকৃত নতুন প্রযুক্তি হওয়ায় এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে এখনও যথেষ্ট গবেষণা হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি ধূমপানের মতোই ক্ষতিকর হতে পারে।


সাধারণ সিগারেটের তুলনায় ই-সিগারেট কিছুটা কম ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়, কারণ এতে টার এবং কার্বন মনোক্সাইড নেই। তবে ই-সিগারেট সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। এটি ধূমপানের বিকল্প হলেও সুস্থ জীবনের বিকল্প হতে পারে না।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন ই-সিগারেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের পক্ষে। তারা মনে করেন, ই-সিগারেট ধূমপান বন্ধ করতে নয় বরং নিকোটিনের একটি নতুন আসক্তি তৈরিতে ভূমিকা রাখছে।


ই-সিগারেট ধূমপানের চেয়ে কম ক্ষতিকর হতে পারে, তবে এটি স্বাস্থ্যঝুঁকি মুক্ত নয়। নিকোটিন আসক্তি, ফুসফুস ও হৃদরোগসহ দীর্ঘমেয়াদে নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই সুস্থ জীবনের জন্য ধূমপান এবং ই-সিগারেট উভয়ই পরিহার করা উচিত।