ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ঝাড়-ফুঁকে রোগ-বালাই সারে?

ঝাড়-ফুঁক বা রুকইয়াহ ইসলামী চিকিৎসার একটি অংশ, যা পবিত্র কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঝাড়-ফুঁকে রোগ-বালাই সারে? ছবি : সংগৃহীত।

ঝাড়-ফুঁক বা রুকইয়াহ ইসলামী চিকিৎসার একটি অংশ, যা পবিত্র কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। ইসলামে ঝাড়-ফুঁক করার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক রোগ নিরাময়ের বৈধতা রয়েছে, তবে এটি অবশ্যই শিরকমুক্ত এবং কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী হতে হবে।


নিচে কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:


কোরআনের আয়াত দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করা বৈধ। আল্লাহ বলেন, আর আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করেছি, যা হচ্ছে আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য রহমত। — (সূরা আল ইসরা: ৮২)


কোরআনের আয়াত পাঠ করা আল্লাহর রহমত এবং শিফার জন্য ব্যবহার করা যায়।


এছাড়া আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, যখন আমি অসুস্থ হই, তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন। — (সূরা আশ-শু'আরা: ৮০)


এটি আমাদের শেখায় যে শেফা বা আরোগ্য একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।


রুকইয়াহর বৈধতা নিয়ে হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) তাঁর পরিবারের লোকদের মধ্যে কারো অসুস্থতা হলে ‘মুআওয়িযাতাইন’ (সূরা ফালাক ও সূরা নাস) পড়ে তাদের ওপর ফুঁ দিতেন। — (সহীহ বুখারি: ৫৭৩৫, সহীহ মুসলিম: ২১৯২)


ঝাড়-ফুঁক করার অনুমতি নিয়ে হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আমাদের রুকইয়াহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে এতে শিরক থাকা যাবে না। — (সহীহ মুসলিম: ২২০০)


নিজের ওপর রুকইয়াহ করা নিয়ে উসমান ইবনে আবুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, আমি নবী (সা.)-এর কাছে আমার শরীরের ব্যথার কথা জানাই। তিনি বললেন, ‘তোমার ব্যথার স্থানে হাত রেখে তিনবার বলো, বিসমিল্লাহ।’ এবং সাতবার বলো, ‘আউজু বিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু। — (সহীহ মুসলিম: ২২০২)


ঝাড়-ফুঁক করার নিয়ম ও শর্ত


১. শিরকমুক্ত হতে হবে: ঝাড়-ফুঁক কেবল কোরআনের আয়াত, নবীজির দোয়া বা শরীয়াহ অনুমোদিত পদ্ধতিতে হতে হবে। কোনো তাবিজ-কবজ, মন্ত্র বা জাদু এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে তা শিরক বলে গণ্য হবে।


২. আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা: ঝাড়-ফুঁক কেবল মাধ্যম, আসল আরোগ্য আসে আল্লাহর কাছ থেকে।


৩. নির্দিষ্ট সূরা বা দোয়া পড়া: সূরা ফাতিহা

আয়াতুল কুরসি (সূরা বাকারা: ২৫৫)

মুআওয়িযাতাইন (সূরা ফালাক ও সূরা নাস)


নবী (সা.)-এর শেখানো দোয়া (রুকইয়াহ)


১. আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক। (অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাক্যের মাধ্যমে সব সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।) — (সহীহ মুসলিম: ২৭০৮)


২. বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুরُّ মা’আসমিহি শাইউন ফি আল-আর্দি ওয়ালা ফি আস-সামা’ ওয়া হুয়া আস-সামি’উল আলীম। — (তিরমিজি: ৩৩৮৮)


ঝাড়-ফুঁক (রুকইয়াহ) কোরআন ও হাদিসে প্রতিষ্ঠিত এবং এটি ইসলামী চিকিৎসার একটি বৈধ পদ্ধতি। তবে, এটিকে শিরকমুক্ত হতে হবে এবং সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে হবে। যদি কেউ কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী পদ্ধতি অবলম্বন করে, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এজন্য বিশ্বস্ত আলেমদের থেকে পরামর্শ নেওয়া উত্তম।


thebgbd.com/NA