ঢাকা | বঙ্গাব্দ

কিডনিতে পাথরের চিকিৎসা

কিডনিতে পাথর হওয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা।
  • | ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
কিডনিতে পাথরের চিকিৎসা কিডনিতে পাথর প্রতিকার

কিডনিতে পাথর হওয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি মূলত মূত্রে অতিরিক্ত খনিজ ও লবণ জমে তৈরি হয়। সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতা ছাড়া এই সমস্যাটি ব্যথা, সংক্রমণ এবং কিডনি কার্যকারিতার হ্রাসের কারণ হতে পারে।


কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, অপর্যাপ্ত পানি পান, অতিরিক্ত লবণ ও প্রোটিনযুক্ত খাবার পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া জিনগত কারণেও কিডনিতে পাথর হতে পারে।


সুষম খাদ্য গ্রহণ না করা, অপর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ এবং ইউরিক অ্যাসিড বা ক্যালসিয়ামের অতিরিক্ত উপস্থিতিও মূত্রে ক্যালসিয়াম বা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি হলে পাথর তৈরি হয়।


চিকিৎসা পদ্ধতি


পানি পান: প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি ছোট পাথর প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করতে সহায়তা করে।


ব্যথানাশক ওষুধ: ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ব্যবহার করা হয়। যেমন: প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন।


মূত্রবর্ধক ওষুধ: মূত্রের পরিমাণ বাড়াতে এবং পাথর বের করতে বিশেষ ওষুধ দেওয়া হয়।


মেডিকেশন: ছোট পাথরের ক্ষেত্রে চিকিৎসক ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ওষুধ দিতে পারেন।


ইএসডব্লিউএল (ESWL): উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি সাউন্ড ওয়েভ ব্যবহার করে পাথরকে ছোট টুকরো করে ভেঙে ফেলা হয়।


ইউরেটারোস্কপি (Ureteroscopy): একটি ক্ষুদ্র টিউব দিয়ে মূত্রনালীর মাধ্যমে পাথর অপসারণ করা হয়।


পারকিউটেনিয়াস নেফ্রোলিথোটমি (PCNL): বড় আকারের পাথরের জন্য অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করা হয়।


লেজার লিথোট্রিপসি: লেজারের মাধ্যমে পাথর ভেঙে ফেলা হয়।


প্রতিরোধে করণীয়


পর্যাপ্ত পানি পান: প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি পান করলে মূত্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত খনিজ বের হয়ে যায়।


সুষম খাদ্য গ্রহণ: খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফলমূল এবং আঁশযুক্ত খাবার রাখুন।


লবণ ও প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ: বেশি লবণ এবং মাংসজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।


নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম: শারীরিক কার্যকলাপ শরীরে খনিজের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।


পরিবারের কারো কিডনিতে পাথরের ইতিহাস থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। নেফ্রোলজিস্ট ডা. আরিফুল ইসলাম বলেছেন, ‘কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত পানি পান। পাথরের আকার যদি ছোট হয়, তবে বেশি পানি পানের মাধ্যমে তা বের করে দেওয়া সম্ভব। তবে বড় আকারের পাথরের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রয়োজন।


ডায়েটিশিয়ান ডা. সামিয়া আক্তার বলেন, ‘কিডনির সুরক্ষার জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ জরুরি। বেশি অক্সালেট ও ইউরিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি এবং শাকসবজি খেলে পাথরের ঝুঁকি কমে।


কিডনিতে পাথর হলে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এবং পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমে কিডনি পাথর প্রতিরোধ করা সম্ভব। চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতিগুলো পাথরের আকার ও অবস্থান অনুযায়ী কার্যকর সমাধান দেয়। তাই সচেতন থাকুন এবং কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষায় উদ্যোগী হন।