বিষণ্ণতা (ডিপ্রেশন) একটি মানসিক অবস্থা, যা একাধিক কারণে সৃষ্টি হতে পারে, যেমন শারীরিক বা মানসিক চাপ, হতাশা, একাকীত্ব, সম্পর্কের টানাপোড়েন বা জীবনের কোনো বড় ধাক্কা। বিষণ্ণতা কখনো কখনো মস্তিষ্কের রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে ঘটতে পারে, তবে এটি আসলে খুবই সাধারণ এবং নিরাময়যোগ্য একটি অবস্থা। যদি আপনি বিষণ্ণতায় ভুগছেন, তবে এটি জয় করার জন্য কিছু নিয়ম মানলে অনেক সাহায্য হতে পারে। নিচে কিছু কার্যকরী নিয়ম আলোচনা করা হলো, যা বিষণ্ণতা থেকে বের হওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ:
নিজের অনুভূতিকে স্বীকার করুন
বিষণ্ণতা তখনই অনুভূত হয়, যখন আমরা নিজের মানসিক অবস্থা অস্বীকার করি বা চাপা দিয়ে রাখি। প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো নিজের অনুভূতিকে স্বীকার করা এবং বুঝতে পারা যে, আপনি যেটি অনুভব করছেন তা একটি বৈধ অনুভূতি। কোনো সমস্যা বা চিন্তা যদি আপনাকে ভারাক্রান্ত করে তোলে, সেটি মুখ খুলে অন্যদের কাছে বলুন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য একটি গভীর সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সঠিক পুষ্টিকর খাদ্য বিষণ্ণতা দূর করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্কে সুখকর রাসায়নিক পদার্থ (এন্ডোরফিন) নিঃসরণে সহায়তা করে, যা মন ভালো রাখে। এটি স্ট্রেস হরমোন কমাতে এবং মনের অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। দৈনিক ৩০ মিনিটের হাঁটা, সাইক্লিং, বা যোগব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে।
যতটা সম্ভব ঘুমের প্রতি মনোযোগ দিন
ঘুমের অভাব বা অস্বাভাবিক ঘুম বিষণ্ণতার অন্যতম প্রধান কারণ। ভালো মানের ঘুম মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে অপরিহার্য। প্রতিদিন রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং ঘুমের সময়সূচী নিয়মিত রাখুন।
পজিটিভ চিন্তাভাবনা গড়ে তুলুন
বিষণ্ণতা মানুষকে নেতিবাচক চিন্তা করতে বাধ্য করে। “আমি কিছুই করতে পারব না,” বা “এটা কখনো ঠিক হবে না” এই ধরনের চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে। প্রতিদিন কিছু সময় নির্ধারণ করুন এবং পজিটিভ চিন্তা করার চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে আপনি দেখতে পাবেন, আপনার মানসিকতা পরিবর্তিত হচ্ছে।
সম্পর্কে ভারসাম্য রাখুন
একা থাকা বা একাকীত্ব বিষণ্ণতার জন্য প্রধান কারণ হতে পারে। আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষগুলির সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে চেষ্টা করুন। বন্ধু, পরিবার বা সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের সঙ্গে অনুভূতি শেয়ার করা আপনার মানসিক অবস্থা উন্নত করতে সাহায্য করবে।
সাহায্য গ্রহণ করুন
বিষণ্ণতার সাথে একা লড়াই করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা আরও বেশি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি। যখন আপনি বুঝতে পারেন যে, আপনি বিষণ্ণতার সাথে একা লড়তে পারছেন না, তখন একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। থেরাপি, কাউন্সেলিং, বা মানসিক চিকিৎসা বিষণ্ণতা কাটানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
ভালো কিছু করার চেষ্টা করুন
নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, এবং এমন কিছু করুন যা আপনাকে সুখী বা সন্তুষ্টি এনে দেয়। সৃজনশীল কাজ যেমন পেইন্টিং, গান শোনা, বই পড়া বা কোনো নতুন স্কিল শেখা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
মাইন্ডফুলনেস এবং মেডিটেশন
মাইন্ডফুলনেস ও মেডিটেশন বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী। প্রতিদিন কিছু সময় নির্ধারণ করুন এবং নিজেকে সময় দিন মানসিক শান্তি লাভ করার জন্য। ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন বা মনোযোগ দিয়ে শারীরিক অনুভূতিগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা আপনাকে মনের শান্তি দিতে পারে।
আপনার নিজের জন্য সময় দিন
নিজের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি অতিরিক্ত কাজের চাপ, একসঙ্গে অনেক দায়িত্ব বা চাপের মধ্যে থাকেন, তবে নিজের জন্য কিছু সময় বের করুন। এমন কিছু করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়, যেমন সিনেমা দেখা, প্রকৃতির মধ্যে হাঁটা, বা এক কাপ চা উপভোগ করা।
বিষণ্ণতা একটি কঠিন অবস্থা, তবে এটি থেকে বের হওয়ার জন্য অনেক উপায় রয়েছে। প্রতিদিন কিছু ছোট পদক্ষেপ অনুসরণ করলে এবং সঠিকভাবে নিজেকে দেখাশোনা করলে, আপনি ধীরে ধীরে এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনি যদি মনে করেন যে বিষণ্ণতা আপনার জীবনকে কঠিন করে তুলছে, তাহলে সঠিক সাহায্য নেওয়ার জন্য দ্বিধা করবেন না।