প্রসাব চেপে রাখা বা দীর্ঘসময় প্রসাব না করা একটি সাধারণ অভ্যাস, কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদীভাবে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কখনো কখনো কাজ বা সামাজিক কারণে আমরা প্রসাব চেপে রাখার সিদ্ধান্ত নিই, তবে এর কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আসুন জানি, প্রসাব চেপে রাখলে শারীরিকভাবে কী কী সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে:
মূত্রথলীর সংক্রমণ
প্রসাব চেপে রাখলে মূত্রথলীর চাপ বাড়তে থাকে এবং এর কারণে মূত্রথলীর পেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘসময় ধরে প্রসাব আটকে রাখলে মূত্রথলীতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, যাকে সাধারণভাবে ইউটিআই (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) বলা হয়। এই সংক্রমণ থেকে তীব্র ব্যথা, জ্বালাপোড়া এবং মূত্রের রঙ পরিবর্তন হতে পারে।
পাথর
প্রসাব দীর্ঘসময় চেপে রাখলে মূত্রথলীতে জমে থাকা অতিরিক্ত প্রসাব মূত্রাশয়ে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। এই পাথরগুলো মূত্রথলি পাথর (Bladder stones) হিসেবে পরিচিত এবং এটি প্রসাবের স্রোত ব্যাহত করতে পারে। মূত্রাশয়ে পাথর জমে গেলে তা অত্যন্ত ব্যথাজনক এবং অস্ত্রোপচার দিয়ে অপসারণ করতে হতে পারে।
মূত্রথলীর অতিরিক্ত প্রসারণ
মূত্রথলি একটি বিশেষ মাপের জায়গায় প্রসাব ধারণ করতে সক্ষম, তবে অতিরিক্ত চাপের ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। একাধিকবার প্রসাব চেপে রাখার ফলে মূত্রথলি বড় হতে শুরু করতে পারে, যার ফলে প্রাকৃতিকভাবে প্রসাব মুক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে পরবর্তী সময়ে প্রসাবের সময় ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে।
মূত্রনালী বা কিডনির সমস্যা
প্রসাব চেপে রাখার কারণে মূত্রের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, এবং এটি কিডনির সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী প্রসাব চেপে রাখার কারণে কিডনি এবং মূত্রনালীর মধ্যে সঞ্চালিত চাপ বাড়ে, যার ফলে কিডনিতে প্রদাহ হতে পারে এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
মূত্রনালীর প্রদাহ
দীর্ঘসময় ধরে প্রসাব চেপে রাখার ফলে মূত্রনালীর প্রদাহ বা সংক্রমণ হতে পারে। এতে অস্বস্তি, ব্যথা, এবং মূত্রের স্রোতে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। প্রদাহ হলে মূত্রনালীর শীথিলতা বাড়তে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
পাইলোনেফ্রাইটিস (Pylonephritis)
এটি একটি গুরুতর কিডনি সংক্রমণ যা মূত্রনালী থেকে কিডনির মধ্যে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে ঘটে। প্রসাব চেপে রাখার কারণে এই ধরনের সংক্রমণ ঘটতে পারে, এবং এটি কিডনির কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। পাইলোনেফ্রাইটিসের উপসর্গ হিসেবে তীব্র তাপমাত্রা, শ্বাসকষ্ট, কোমরের নিচে ব্যথা, এবং ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
পেশী দুর্বলতা
প্রসাব চেপে রাখলে মূত্রথলীর পেশী দুর্বল হতে শুরু করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী চেপে রাখার ফলে পেশীগুলোর নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিতে পারে, এবং এর ফলে ইনকন্টিনেন্স (Incontinence) বা প্রসাব আটকে রাখতে না পারার সমস্যা তৈরি হতে পারে। এই সমস্যা যখন সৃষ্টি হয়, তখন ব্যক্তিকে অস্বস্তিতে পড়তে হয় এবং দৈনন্দিন জীবনে অনেক অসুবিধা হতে পারে।
প্রসবকালীন সমস্যা
মূত্রাশয়ের সঠিক স্বাস্থ্য প্রজনন সংক্রান্ত অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেমন মাসিকের অস্বাভাবিকতা এবং প্রসবকালীন প্রস্রাবের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। প্রসাব চেপে রাখার কারণে এসব সমস্যাও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
মনোযোগের অভাব এবং মানসিক চাপ
দীর্ঘসময় ধরে শারীরিক চাপে থাকা মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং অস্থিরতার সৃষ্টি হতে পারে, যা শরীরের অন্যান্য রোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে। যখন আপনার শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়, তখন আপনি মানসিকভাবে অস্থির হতে পারেন।
পেটের ব্যথা এবং গ্যাস সৃষ্টি
প্রসাব চেপে রাখার কারণে পেটের উপর চাপ পড়ে, যা গ্যাস, ব্যথা এবং অন্যান্য পাচনতন্ত্রের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে পেট ফাঁপা এবং অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
প্রসাব চেপে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। এই অভ্যাসটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবর্তন করা উচিত। যখনই প্রসাবের প্রয়োজন হয়, তখনই সেটি করা উচিত যাতে শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। নিয়মিত পানি পান করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখলে প্রসাবের সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।