ঢাকা | বঙ্গাব্দ

মসজিদে নববি নির্মাণের ইতিহাস

এটি ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম মসজিদ এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজেই এই মসজিদ নির্মাণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
মসজিদে নববি নির্মাণের ইতিহাস ফাইল ছবি

ইসলামের ইতিহাসে মসজিদে নববি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এটি ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম মসজিদ এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজেই এই মসজিদ নির্মাণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মদিনার এই মসজিদ মুসলিম উম্মাহর জন্য শুধু নামাজ আদায়ের স্থান নয়; বরং এটি ইসলামের জ্ঞানচর্চা, সমাজিক জীবন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে।


মসজিদে নববির প্রাথমিক নির্মাণ


৬২২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর তিনি মদিনায় একটি কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। মদিনায় পৌঁছে তাঁর উট ‘কাসওয়া’ যেখানে থামে, সেই স্থানটিকে তিনি মসজিদ নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করেন। ওই স্থানটি মূলত দুটি এতিম শিশুর মালিকানাধীন ছিল। তাদের নাম ছিল সাহেল এবং সুহেল।


মহানবী (সা.) তাদের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেন। তবে তাঁরা জমিটি বিনামূল্যে দান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নবী করিম (সা.) ন্যায্যমূল্য প্রদান করে জমি গ্রহণ করেন।


মহানবী (সা.) নিজেই সাহাবিদের সঙ্গে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। মাটি খনন, ইট বহন এবং নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এই কাজের মাধ্যমে তিনি শ্রমের মর্যাদা এবং সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।


মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয় কাঁচা ইট, খেজুর গাছের তক্তা, এবং খেজুরের পাতা। ছাদ হিসেবে ব্যবহার করা হয় খেজুরের পাতা এবং গাছের শাখা। প্রাথমিকভাবে মসজিদটি ছিল অপেক্ষাকৃত ছোট। এটি একটি আয়তাকার স্থান ছিল, যার দৈর্ঘ্য ছিল আনুমানিক ৩৫ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৩০ মিটার। মসজিদের একপাশে মহানবী (সা.) এবং তাঁর পরিবার থাকার জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়।


মসজিদের একটি অংশে ‘সুফফা’ নামে পরিচিত একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়, যেখানে দরিদ্র সাহাবি ও ইসলামের নতুন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করতেন।


মসজিদের প্রসার এবং সংস্কার


১. খলিফা আবু বকর (রা.) এবং উমর (রা.)-এর আমল: মসজিদের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব এবং মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মসজিদে নববির আয়তন বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা দেয়। খলিফা আবু বকর (রা.) এর শাসনামলে মসজিদে নববিতে কিছু সংযোজন করা হয়। খলিফা উমর (রা.) এর শাসনামলে মসজিদটির প্রথম বড় সংস্কার হয়। আয়তন বাড়ানো হয় এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য আরও শক্তিশালী উপাদান ব্যবহার করা হয়।


২. খলিফা উসমান (রা.)-এর আমল: খলিফা উসমান (রা.) এর সময় মসজিদে নববি আরও সম্প্রসারিত হয়। তখন পাথর এবং খেজুর কাঠের সমন্বয়ে মসজিদের কাঠামো আরও মজবুত করা হয়।


মসজিদের আধুনিক রূপান্তর

১. উমাইয়া এবং আব্বাসীয় শাসনামল: উমাইয়া শাসকরা মসজিদে নববি আরও প্রসারিত করেন এবং দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য যোগ করেন। আব্বাসীয় শাসকরা মসজিদের ভেতরে ইসলামিক স্থাপত্যের সেরা উদাহরণ হিসেবে বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন।


২. অটোমান সাম্রাজ্যের সময়: অটোমান শাসকরা মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অনেক অবদান রাখেন। তারা মসজিদে অভূতপূর্ব টাইলস এবং মার্বেল ব্যবহার করেন।


৩. সৌদি আরবের যুগে সম্প্রসারণ: সৌদি সরকার মসজিদে নববির বৃহত্তম সম্প্রসারণ কর্মসূচি গ্রহণ করে। আজকের মসজিদে নববি আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ। এটি একসঙ্গে লক্ষাধিক মুসল্লি ধারণ করতে পারে। মসজিদে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, উন্নত শব্দ ব্যবস্থা, এবং চলন্ত সিঁড়ির মতো সুবিধা সংযোজিত হয়েছে।


মসজিদে নববি ইসলামের ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মহানবী (সা.)-এর হাত ধরে এর নির্মাণ শুরু হয় এবং এর প্রতিটি ইট ইসলামের প্রথম যুগের সংগ্রাম, প্রেরণা, ও ঐক্যের প্রতীক বহন করে। মসজিদটি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একতা ও সৌহার্দ্যের বার্তা বহন করে চলেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা মুসলিমদের কাছে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।


thebgbd.com/NIT