প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, খেলাপি ঋণ, মূল্যস্ফীতি ও গড় আয়সহ বিভিন্ন সূচকে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে একটি চমৎকার উন্নয়ন গল্প সাজানো হয়েছিল। এই বানোয়াট পরিসংখ্যানের ফাঁদে পড়েছে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)সহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা।
অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এই পরিসংখ্যান জালিয়াতিকে 'উন্নয়নের নামে বিস্ময়কর দুর্নীতি' হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, আর্থিক খাতের এমন ভয়াবহ মিথ্যাচার দেশের ইতিহাসে বিরল।
শেখ হাসিনার শাসনে অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান সাজানোর প্রধান কারিগর ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী লোটাস কামাল, সালমান এফ রহমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন গভর্নর। তাদের নেতৃত্বে একটি ডাটা জালিয়াতি চক্র গড়ে তোলা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক স্বার্থে এই জালিয়াতি করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যানে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের গরমিল ধরা পড়ে। ইপিবি দাবি করেছিল, দশ মাসে রপ্তানি আয় ৪৭.৭৪ বিলিয়ন ডলার, অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, তা ৩৩.৬৭ বিলিয়ন ডলার।
মূল্যস্ফীতি এবং গড় আয়ের বাস্তবতা
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নামে প্রকৃত তথ্য আড়াল করা হয়েছে। খাদ্যপণ্যের দামের বিপরীতে দেখানো মূল্যস্ফীতি ছিল মনগড়া। ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে গড় আয় বাড়ানোর তথ্যও বাস্তবতার সঙ্গে মিলেনি।
দারিদ্র্যতার তথ্য নিয়েও একই ধরনের জালিয়াতি করা হয়েছে। সরকারের তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৮.২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমেছে, যা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের রয়েছে গভীর সন্দেহ।
এদিকে, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ গোপন রেখে নতুন ঋণ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা, যার বেশিরভাগই গত ১৫ বছরের।
বিশ্বব্যাংক ও এডিবি সরকারের মিথ্যা পরিসংখ্যান নিয়ে নিরব থেকেছে। ২০২৩ সালে "সাউথ এশিয়ান পলিসি ইনিশিয়েটিভ" এর পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংককে একটি চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়। বিশ্বব্যাংক কেবল দায়সারাভাবে জবাব দেয়।
thebgbd.com/AR