ঢাকা | বঙ্গাব্দ

পোপ ফ্রান্সিসের বড়দিন পালন

বুধবার স্থানীয় সময় মধ্যাহ্নে পোপ ফ্রান্সিস পুরো বিশ্বকে তার ঐতিহ্যবাহী বড়দিনের আশীর্বাদ, ‘উরবি এট অরবি’ প্রদান করেন।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
পোপ ফ্রান্সিসের বড়দিন পালন পোপ ফ্রান্সিস

বিশ্বজুড়ে চলমান ঘৃণা, সহিংসতা, সংঘাত-সংঘর্ষ আর যুদ্ধের কালো মেঘের অশুভ ছায়া মাথায় নিয়ে উদ্বেগের মাঝে ভারাক্রান্ত মনে রোমান ক্যাথলিক গির্জার বিশ্ব সদর দপ্তর ভ্যাটিকানে বুুধবার বিশ্বব্যাপী বড় দিনের উৎসব উদযাপন শুরু করেন পোপ ফ্রান্সিস। বেশ উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে বড়দিন উদযাপনকারীরা সেখানে লাল-সাদা সান্তা টুপি পরে রঙ-বেরংয়ের মোমবাতির বর্ণিল আলোয় গরিবদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করেন।


রোম থেকে এক প্রতিবেদনে এএফপি জানায়, হামাস-ইসরায়েল এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের আবহে ভ্যাটিকান সিটির রেনেসাঁ শৈলীতে নির্মিত সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকা গির্জায় পোপ ফ্রান্সিস তার বক্তব্যে বিশ্ববাসীকে যুদ্ধ, হাসপাতাল ও স্কুলে বোমা হামলা এবং গুলিতে আহত শিশুদের কথা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার অনুরোধ জানান।


এর আগে তিনি ইসরায়েলি হামলার ‘নিষ্ঠুরতার’ কঠোর নিন্দা জানালে ইসরাইলি কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়ে বক্তব্যের নিন্দা জানানো হয়। তার কিছুদিন পর পোপ এই যুদ্ধ নিয়ে তার উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করলেন।


বুধবার স্থানীয় সময় মধ্যাহ্নে পোপ ফ্রান্সিস পুরো বিশ্বকে তার ঐতিহ্যবাহী বড়দিনের আশীর্বাদ, ‘উরবি এট অরবি’ প্রদান করেন। তবে ইসরায়েলের নিষ্ঠুরতার কারণে যিশুর জন্মস্থান (বাইবেল অনুসারে), ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরের শহর বেথলেহেমে বিশ্বব্যপী পোপের আশির্বাদমূলক উরবি এট অরবি বন্ধ রাখা হয়।


বেথেলহেমে পর্যটকদের আকর্ষণ করা টানা দুই বছরের বিশাল ক্রিসমাস ট্রির সাজসজ্জা এবং শুধুমাত্র কয়েকটি বাতি জ্বালিয়েই সম্পন্ন হয়েছে এ বছর। এ সম্পর্কে বেথেলেহেমের মেয়র আন্তন সালমান এএফপিকে বলেন, ‘এই বছর আমরা আমাদের আনন্দ সীমিত করেছি।’ ক্যাথলিক চার্চের ল্যাটিন পিতৃপুরুষের উপস্থিতিতে বিখ্যাত চার্চ অফ দ্য নেটিভিটির মধ্যরাতের গণপ্রার্থনাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতায় কঠোর ধর্মীয় আচার বজায় রাখবে এবার।


জেরুজালেমের ল্যাটিন প্যাট্রিয়ার্ক আর্চবিশপ পিয়েরবাতিস্তা পিৎজবালা মঙ্গলবার একটি ছোট জনতাকে বলেন, তিনি সবেমাত্র গাজা থেকে ফিরেছেন, যেখানে তিনি কেবলমাত্র ধ্বংস, দারিদ্র্য আর বিপর্যয় দেখে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘তবে জীবনও দেখেছি, তারা হাল ছেড়ে দেয়নি। তাই আপনাদেরও হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। কখনোই না।’


ফিলিস্তিনি নগরী বেথেলহেমের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শহর ম্যাঙ্গার স্কোয়ারে, একদল স্কাউট নীরবতা ভেঙে কুচকাওয়াজ করে। তাদের হাতে ছিল নানা স্লোগান লেখা ব্যানার। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আমাদের বাচ্চারা খেলতে চায়, হাসতে চায়’, ‘আমরা জীবন চাই, মৃত্যু নয়!’, ‘এখনই গাজায় গণহত্যা বন্ধ কর!’ অবরুদ্ধ ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার বিষয়ে জেরুজালেমের বাসিন্দা মাখউল বলেন, ‘আমাদের ওপর দিয়ে যা যাচ্ছে, তা খুবই ভয়াবহ। আমরা এসব স্মৃতি কখনোই ভুলে যাব না।’ 


পশ্চিম তীর ইসরাইলের দখলে থাকায় প্রায় ১১ শ’ খ্রিষ্টানের বসতিস্থল গাজা সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এরই মাঝে গাজার একটি গির্জায় শত শত খ্রিষ্টান যুদ্ধ অবসানের জন্য প্রার্থনা করতে জড়ো হয়। কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজা শহরের সেন্ট পোরফিরিয়াসের দ্বাদশ শতকে নির্মিত গ্রিক অর্থোডক্স চার্চে আশ্রয়ে থাকা জর্জ আল-সায়েগ বলেন, ‘এ বছরের বড়দিন মৃত্যু ও ধ্বংসের গন্ধবাহী।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কোনো আনন্দ নেই, এখানে উৎসবের আমেজ নেই। এমনকি আমরা এও জানি না যে, পরের ছুটি পর্যন্ত কেউ বাঁচবে কি-না!’


অপরদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বড়দিন উপলক্ষে বিশ্বের খ্রিষ্টানদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বার্তায় ‘অশুভ শক্তির’ বিরুদ্ধে ইসরাইলের লড়াইকে সমর্থন দেওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানান।


ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীরা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাত্র দুই সপ্তাহ পর সিরিয়ার একটি শহরে ক্রিসমাস ট্রি পোড়ানোর প্রতিবাদে দামেস্কের খ্রিষ্টান এলাকায় শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। জর্জেস নামে একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমাদের দেশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বসবাস করতে দেয়া না হলে আমরা আর এখানে থাকব না।’ 


জার্মানির একটি বাজারে প্রাণঘাতী হামলার পর অনেক পরিবারের জন্য বড়দিনের আনন্দ-উৎসব ম্লান হয়ে গেছে। এ হামলার পর পুরো জার্মানি জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। হামলার পর প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার এক বার্তায় এই শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রার্থনা করেন। তিনি  বলেন, ‘ঘৃণা ও সহিংসতাই চূড়ান্ত শব্দ হতে পারে না।’ 


আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনেস আয়ারেসে বড়দিনের সংহতি নৈশভোজে প্রায় তিন হাজার গৃহহীন লোককে খাওয়ানো হয়। দেশটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্য-জর্জরিত। মুভমেন্ট অফ এক্সক্লুডেড ওয়ার্কার্সের মুখপাত্র ও অন্যতম সংগঠক মারিয়ানা গঞ্জালেজ বলেন, ‘এটি একটি বিশেষ বছর। কারণ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখানে আরও বেশি দরিদ্র মানুষ রয়েছে।’ তবে গ্যাস বেলুনে সজ্জিত অনুষ্ঠানটিতে গান ও ক্লাউনের কৌতুক ছিল উপভোগ্য ও আনন্দময়। অন্যত্র বড়দিনের আগের দিন দরিদ্র পরিবারগুলোকে খাবার ও উপহার দেওয়া হয়। 


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সান্তা ক্লজের ‘ট্র্যাকিং’ করার বার্ষিক ঐতিহ্যটি কার্যকর হয়েছে। সেখানে মার্কিন বিমান বাহিনীর একজন জেনারেল বলেছেন, সাম্প্রতিক রহস্যময় ড্রোন দেখা যাওয়ার ঘটনা উৎসবকে প্রভাবিত করতে পারে ভেবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।


সান্তা ও তাকে বহনকারি রেনডিয়াররা জাপান, উত্তর কোরিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ আরও পূর্বের দেশগুলো পরিদর্শন করার পর রাশিয়া ও ইরানে থেমেছে বলে উত্তর আমেরিকার অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড জানানোর পর মার্কিন বিমানবাহিনী এ আশ্বাস দেয়। নোরাড কমান্ডার গিলোট ফক্স নিউজকে বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা আকাশে ড্রোন ও অন্য কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু এ বছর সান্তার জন্য ড্রোন নিয়ে কোনো অসুবিধার কথা ভাবছি না।’


প্যারিসের নটরডেম ক্যাথেড্রালে ২০১৯ সালে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের পর এটি পুনরায় খোলা হলে এই প্রথম বড়দিন উপলক্ষে স্থানীয় এবং পর্যটকরা এখানে জড়ো হন। প্রকৌশলী জুলিয়েন ভিওলে (৪০) বলেন, ‘আমরা বিকাল ৪টায় মানুষদের ভিড় দেখতে এবং একটি ভালো স্থান খুঁজে পেতে তাড়াহুড়া করে এখানে এসেছি। এটি একটি চমৎকার স্মৃতিস্তম্ভ।’ তিনি তার দুই সন্তানের সঙ্গে সুইজারল্যান্ড থেকে প্যারিস ভ্রমণ করছেন।


সূত্র: এএফপি, সিএনএন


এসজেড