ঢাকা | বঙ্গাব্দ

মানবজীবনে মিথ্যার কুপ্রভাব

ইসলামে মিথ্যা একটি বড় গুনাহ (পাপ) হিসেবে বিবেচিত।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
মানবজীবনে মিথ্যার কুপ্রভাব সংগৃহীত

মিথ্যা, যা সমাজে বহু ধরনের সমস্যার জন্ম দেয়, ইসলামে একটি বড় গুনাহ (পাপ) হিসেবে বিবেচিত। মিথ্যা বলা মানুষের চরিত্রে দুর্নীতি এবং আল্লাহর কাছ থেকে দূরত্ব তৈরি করে। কোরআন এবং হাদিসে মিথ্যার কুপ্রভাব সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যা মুসলিমদের সততার পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে।


১. মিথ্যা কোরআনে নিষেধ: কোরআনে আল্লাহ তাআলা মিথ্যার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। সুরা আল-হাজ (২২: ৩০) আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এটি (মিথ্যা) আপনারা আল্লাহর নামে শপথ করে পরস্পরের মধ্যে মিথ্যা বলবেন না।’ 


এ আয়াতটি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে, আল্লাহর নামে মিথ্যা বলাটা গর্হিত কাজ এবং তা মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে। মিথ্যা কোনোভাবে বৈধ নয় এবং সমাজে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।


২. মিথ্যার কুপ্রভাব সমাজে: কোরআন এবং হাদিসে বলা হয়েছে যে, মিথ্যা সমাজে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। মিথ্যা সমাজে অনাচারের পরিবেশ তৈরি করে এবং মানুষের মধ্যে বিশ্বাসহীনতা ও বিভেদ সৃষ্টি করে। এর ফলে সমাজের শান্তি ও সুষ্ঠু জীবনযাত্রা বিপন্ন হয়।


এ সম্পর্কে সুরা আল-আহযাব (৩৩:৭০) আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বলো।’ 


এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ মুমিনদের সততা এবং সত্যবাদিতার দিকে আহ্বান জানিয়েছেন। সত্য কথা বলার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আস্থা ও শান্তি তৈরি হয়।


৩. মিথ্যা সম্পর্কে হাদিস: নবী (সা.) বলেন, ‘মিথ্যা বলার মধ্যে এক ধরণের নৈতিক পাপ রয়েছে, যা মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে।’ (সহীহ বুখারী)


এ হাদিসে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, মিথ্যা বলা শুধু ছোট খাটো গুনাহ নয়, বরং এটি এমন একটি গুরুতর পাপ যা মানুষকে পরকালেও শাস্তি ভোগ করতে পারে। মিথ্যার কারণে মানুষের ধর্মীয় ও পার্থিব জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


নবী (সা.) আরও বলেন, ‘সতর্ক থাকো! মিথ্যা কথা কথা না বলো, কেননা মিথ্যা সব ধরনের পাপের দিকে নিয়ে যায়।’ (সহীহ মুসলিম)


এ হাদিসে বলা হচ্ছে, মিথ্যা কথা এমন একটি বিষয় যা মানুষকে আরও বড় পাপের দিকে পরিচালিত করতে পারে। সুতরাং, মিথ্যা বলা এক ধরনের আত্মবিধ্বংসী কাজ।


৪. মিথ্যার বিভিন্ন প্রকার: মিথ্যা শুধু কথায় নয়, বরং কাজেও হতে পারে। যেমন, কাউকে অযথা প্রতিশ্রুতি দেওয়া, কাউকে অযথা কষ্ট দেওয়া বা পরস্পরের সম্পর্কে মিথ্যা গুজব রটানো — সবই মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে এসব কাজকে অত্যন্ত গর্হিত এবং নিষিদ্ধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।


কোরআন এবং হাদিসে প্রতারণা, মিথ্যা বলা এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার ওপর স্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সুরা আল-ইমরান (৩: ১৬১) আয়াতে বলা হয়েছে. যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে, তার কোন ধর্মীয় অবস্থান নেই।’ 


৫. মিথ্যার পরিণতি: মিথ্যা শুধু এখানে দুনিয়াতে শান্তি ও সুখ থেকে বঞ্চিত করে না, বরং পরকালে দুঃখ ও শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কোরআন এবং হাদিসে মিথ্যা এবং তার পরিণতি সম্পর্কে সাফ এবং পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মিথ্যাবাদীদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করেছেন।


মিথ্যার পরিণতি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘মিথ্যা বলা সর্বদা মানুষের জন্য দুর্ভোগ এবং আযাবের কারণ।’ (সহীহ মুসলিম)


এ হাদিসটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে, মিথ্যার জন্য শাস্তি স্বরূপ মানুষের জীবন অশান্তির দিকে এগিয়ে চলে।


মিথ্যা একটি গুরুতর অপরাধ যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোরআন ও হাদিসের আলোকে মিথ্যার কুপ্রভাব শুধু দুনিয়াতেই নয়, পরকালেও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং, একজন মুসলিমের জন্য মিথ্যা থেকে সতর্ক থাকা, সৎ ও সত্যবাদী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। মিথ্যার পরিবর্তে সত্য কথা বললে মানুষের মাঝে বিশ্বাস ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।


thebgbd.com/AR