মেলবোর্ন টেস্টের পঞ্চম দিনের তিনটা সেশন কাটিয়ে দিয়তে পারলেই ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারতো ভারত। কাজটা অস্ট্রেলিয়ার জন্যই বরং কঠিন ছিল। শেষ দিনে ভারতের ১০ উইকেটই নিতে হতো অজি বোলারদের। প্রথম সেশনে ৩ উইকেট হারানো ভারত দ্বিতীয় সেশনে যশস্বী জয়সওয়াল এবং রিশভ পন্তের ব্যাটে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ক্রমেই হতাশা বাড়ছিল স্বাগতিকদের। কিন্তু ট্রাভিস হেড পন্তকে ফেরাতেই ভেঙে পড়ে ভারতের সকল প্রতিরোধ। একের পর এক উইকেট হারিয়ে বক্সিং ডে টেস্টে হারের মুখ দেখল রোহিত শর্মার দল। আর এই টেস্ট জিতে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পথে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) এমসিজি'তে ভারতকে ১৮৪ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ ইনিংসে ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩৩৯ রান। ভারত ১৫৫ রানেই গুটিয়ে যায়। ৩৪ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে ভারত।
এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
গতকাল ৯ উইকেটে ২২৮ রান নিয়ে দিন শেষ করা অস্ট্রেলিয়া আজ আর মাত্র ৬ রান যোগ করেই অলআউট হয়ে যায়। ফলে ভারতের জয়ের জন্য ৩৪০ রান লক্ষ্য দাঁড়ায়।
টেস্টের পঞ্চম দিনে এই রান রান তাড়া করে ভারত যে জেতার চেষ্টা করবে না তা অনুমিতই ছিল। আর চেষ্টা করার উপায়ও ছিল না। কারণ সকালে উইকেটে থাকা মুভমেন্ট কাজে লাগিয়ে ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক। তাতে ৩৩ রানেই ৩ উইকেট হারায় ভারত।
বাজে ফর্মের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এই ইনিংসেও দুই অঙ্কের রানের দেখা পাননি রোহিত শর্মা। ৯ রান করে কামিন্সের বলে মার্শের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। সেই ওভারের শেষ বলে কেএল রাহুলও বিদায় নেন। ৫ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ভারতের রান তখন মোটে ২৫।
৩৩ রানের মাথায় বিরাট কোহলিও বিদায় নেন। স্টার্কের বলে স্লিপে ধরা পড়ার আগে ৫ রান করেন বিরাট।
তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। জয়সাওয়াল ও পন্ত মিলে অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের দারুণ জবাব দিচ্ছিলেন। ৩ উইকেটে ১১২ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় ভারত।
এই জুটির কল্যাণে দ্বিতীয় সেশনটা কোনো উইকেট না হারিয়েই কাটিয়ে দেয় ভারত।
এক সেশনে ৭ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট জয় তখন আকাশ কুসুম কল্পনা মনে হচ্ছিল। উইকেটের আশায় বাধ্য হয়ে পার্ট টাইমার ট্রাভিস হেডের হাতে বল তুলে দেন কামিন্স। আর তাতেই পাশার দান উল্টে যায়।
তৃতীয় সেশনের পঞ্চম ওভারে হেডের খাটো লেন্থের অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে মারতে গিয়ে সর্বনাশ করে বসেন পন্ত। ১০৪ বলে ২ চারে ৩০ রান করে শেষ হয় পন্তের প্রতিরোধ। আর সেই সঙ্গে ভারতের পতনের শুরুটাও।
১২১ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর ভারত শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে আর ৩৪ রান তুলতেই। পন্তের বিদায়ের তিন ওভার পড়ে মাত্র ৭ বলের মধ্যে বিদায় নেন জাদেজা (২) ও নিতিশ কুমার রেড্ডি (১)। চা বিরতির পর মাত্র ৯.২ ওভারের মধ্যে ১৮ রানে সব মিলিয়ে ৩ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন মহাবিপদে। ভরসা বলতে তখন পর্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট করে যাওয়া জয়সওয়াল।
২০৮ বলে ৮৪ রান করা জয়সওয়ালকে ফিরিয়েছেন কামিন্স, কিন্তু তাতে বাংলাদেশি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলারও অবদান আছে। প্রযুক্তিকে তোয়াক্কা না করে চোখের ওপর ভরসা করে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে জয়সওয়ালকে আউট দেন টিভি আম্পায়ারের দায়িত্বে থাকা এই বাংলাদেশি। এরপরই অজিরা মরণ কামড় দেয়। ভারতীয় ব্যাটারদের চারদিক থেকে ঘিরে ধরে অজি ফিল্ডাররা।
১৭ বলে ৭ রান অরে আকাশদীপ, ৮ বলে রানের খাতা না খুলেই বুমরাহ ফেরেন। ওয়াশিংটন সুন্দর ৪৫ বলে ৫ রান করে চেয়ে চেয়ে দলের হার দেখেছেন। শেষ ব্যাটার সিরাজও ফিরেন রানের খাতা খোলার আগেই।
প্যাট কামিন্স ১৮ ওভারে ৫ মেডেনসহ ২৮ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন। স্কট বোল্যান্ডও ১৬ অভ্রে ৭ মেডেনসহ ৩৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন। নাথান লায়ন ২টি এবং মিচেল স্টার্ক ও ট্রাভিস হেড ১টি করে উইকেট ভাগাভাগি করেন।
দুই ইনিংসেই ৩টি করে উইকেট নেয়ার পাশাপাশি প্রথম ইনিংসে ৪৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন অজি অধিনায়ক কামিন্স।
thebgbd.com/NIT