‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ। মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে আন্দোলনের কার্যালয়ে বৈঠকের ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন।
হান্নান মাসউদ জানান, জুলাই বিপ্লবের ঐতিহাসিক দলিল উপস্থাপনে বিভিন্ন ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে সরকার এটির ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে, যা তাঁদের জন্য একটি প্রাথমিক বিজয়। তিনি বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপ্লবীরা একত্রিত হবেন। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে, তবে এটি আন্দোলনকারীদের রাজপথে একত্রিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারবে না। তিনি আরও জানান, শহীদ মিনারে আহত থেকে শুরু করে শহীদ পরিবার এবং দেশের মা-বোনেরা প্রোক্লেমেশনের পক্ষে রাজপথে নামবেন।
মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র পাঠ করার ঘোষণা দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাঁদের দাবি, ঘোষণাপত্রে দুটি মৌলিক বিষয় রয়েছে। এর একটি হলো ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তার ‘কবর’ রচনা করা। আরেকটি হলো ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা।
বিএনপিসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো এ ঘোষণাপত্র নিয়ে স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দলগুলোর কেউ কেউ মনে করছে, ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার আগে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন ছিল। হঠাৎ এই ধরনের ঘোষণা বিভাজন তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করছে তারা। যদিও কোনো কোনো দল ছাত্র আন্দোলনের এই উদ্যোগকে নৈতিকভাবে সমর্থন জানিয়েছে।
রাত পৌনে নয়টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমতের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঘোষণাপত্রটি জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা এবং রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার লক্ষ্যে তৈরি করা হবে বলে জানান তিনি।
বৈঠকের পর হান্নান মাসউদ সাংবাদিকদের আরও বলেন, ঘোষণাপত্র নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত সেই ষড়যন্ত্রে পেরেক মেরে দিয়েছে। তিনি সারা দেশের মানুষকে আহ্বান জানান, ঘোষণাপত্রের পক্ষে রাজপথে নামতে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামীকাল ৫ আগস্টের মতো একটি গণজোয়ার দেখা যাবে।
এক সাংবাদিক জানতে চাইলে, ঘোষণাপত্র শহীদ মিনারে পাঠ করা হবে কি না, তখন পাশে থাকা একজন নেতিবাচক সংকেত দেন। এরপর হান্নানের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীরা মিছিল করে স্থান ত্যাগ করেন। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা রাত সোয়া একটায় আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং দেওয়ার ঘোষণা দেন।
thebgbd.com/NA