ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ভূমিকম্প নিয়ে বাংলাদেশে জন্য ভালো সংবাদ নেই

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান প্লেট টেকটোনিক্সের কারণে ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ০৮ জানুয়ারি, ২০২৫
ভূমিকম্প নিয়ে বাংলাদেশে জন্য ভালো সংবাদ নেই সংগৃহীত

জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই বাংলাদেশে দু'বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমন ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এগুলো ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আগমনী বার্তা হতে পারে। বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থান করায় ঝুঁকির মাত্রাও বেশি। বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০ শহরের তালিকায় রয়েছে রাজধানী ঢাকা। তবুও দুর্যোগ মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতির অভাব লক্ষণীয়।


বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান প্লেট টেকটোনিক্সের কারণে ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গত তিন মাসে আশপাশের অঞ্চলে ৫০টিরও বেশি মৃদু ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। গত ১৫ বছরে দেড় শতাধিক ভূমিকম্পের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ভূমিকম্প বড় ধরনের ধাক্কার ইঙ্গিত বহন করছে। বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।


ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ভবনগুলোকে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী করতে না পারলে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব নয়। ঝুঁকি মোকাবিলায় শুকনো খাবার, পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসামগ্রী মজুত রাখার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।


ঢাকা শহরের অধিকাংশ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভবনগুলো যথাযথ নকশা ছাড়াই নির্মিত হওয়ায় বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বুয়েটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়তে পারে। এতে তৈরি হবে সাত কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ।


ইতিহাস বলছে, ১৮৬৯ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে পাঁচবার ৭-এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯১৮ সালের শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প এবং ১৮৮৫ সালের ভূমিকম্পের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি এ অঞ্চলে বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।


প্লেট টেকটোনিক্স অনুসারে, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে তিনটি টেকটোনিক প্লেট অতিক্রম করেছে—ইউরেশিয়ান, ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান এবং মিয়ানমার মাইক্রো প্লেট। প্লেটগুলো প্রতি বছর প্রায় ৫ সেন্টিমিটার সরছে, যা ভূমিকম্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।


অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেছেন, শুধুমাত্র উন্নত সরঞ্জাম দিয়ে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব নয়। পুরনো ও দুর্বল ভবনগুলো মেরামত না করলে প্রাণহানি ঠেকানো যাবে না। ঢাকার গ্যাস ও বিদ্যুতের অপরিকল্পিত লাইন ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।


অধ্যাপক জিল্লুর রহমান মনে করেন, বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর পাশাপাশি ঢাকায় ব্যাপক ক্ষতি হবে। কারণ, ঢাকার বেশিরভাগ ভবনই ভূমিকম্প সহনশীল নয়। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, ভবন নির্মাণে সঠিক নকশা মেনে চলা জরুরি। তবে দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে নিয়মিত তা লঙ্ঘন করা হচ্ছে।


রিয়েল এস্টেট খাতের চাপে অনুমোদনহীন ভবনগুলোকে বৈধতা দেওয়া এবং জলাভূমি ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। বিশেষজ্ঞ আদিল মুহাম্মদ খান বলেছেন, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং আইনের শিথিলতা ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ সংকট ডেকে আনবে।


বাংলাদেশের ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে কার্যকর প্রস্তুতি ও সচেতনতা ছাড়া এই দুর্যোগ মোকাবিলা অসম্ভব। প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা, আইন মেনে নির্মাণ কার্যক্রম, এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দেরি করলে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে না।


thebgbd.com/NIT