কিয়ামতের দিন মানুষ তার সমস্ত কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করবে। সেদিন ধন-সম্পদ বা সামাজিক মর্যাদা কোনো কাজে আসবে না, বরং শুধু সৎ আমলই রক্ষা করবে। কোরআন ও হাদিসে সেদিনের ভয়াবহতা এবং সেসব আমল সম্পর্কে বলা হয়েছে, যা মানুষের জন্য উপকারী হবে।
কোরআনে আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন নেক আমল নিয়ে আসবে, তার জন্য দশগুণ পুরস্কার থাকবে, আর যে খারাপ কাজ নিয়ে আসবে, তাকে সমপরিমাণ শাস্তি দেওয়া হবে।” (সুরা আনআম, আয়াত ১৬০)।
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ভালো আমল কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য মুক্তির কারণ হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে: তার পরিবার, তার সম্পদ, এবং তার আমল। এর মধ্যে দুটি ফিরে আসে, আর একটি থেকে যায়। পরিবার ও সম্পদ ফিরে আসে, আর আমল থেকে যায়।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)
এই হাদিস স্পষ্ট করে দেয় যে, দুনিয়ার জীবনে অর্জিত সৎ আমলই একমাত্র কিয়ামতের দিন মানুষের কাজে আসবে।
সেসব আমলের মধ্যে প্রথমেই আসে নামাজ। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। যদি তা সঠিক হয়, তবে বাকি আমলও গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি তা নষ্ট হয়, তবে বাকি আমলও প্রত্যাখ্যাত হবে।” (তিরমিজি)
দ্বিতীয়ত, সদকা বা দান করা। কোরআনে আল্লাহ বলেন, “যারা গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে এবং তাদের প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্য ধারণ করে, তাদের জন্য আছে চিরস্থায়ী সুখময় আবাস।” (সুরা রাদ, আয়াত ২২)। সদকা মানুষের গুনাহ মোচন করে এবং কিয়ামতের দিন শীতল ছায়া হিসেবে কাজ করবে।
তৃতীয়ত, কোরআন তিলাওয়াত ও তার উপর আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কোরআন কিয়ামতের দিন তার পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে।” (মুসলিম)
যারা কোরআনের উপর আমল করে, তারা কিয়ামতের দিন সম্মানিত হবে।
চতুর্থত, আল্লাহর স্মরণ বা জিকির। কোরআনে বলা হয়েছে, “যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা করে, তাদের জন্য আল্লাহ জান্নাত প্রস্তুত করেছেন।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯১)
আল্লাহর স্মরণ দুনিয়া ও আখিরাতে আত্মার শান্তি এনে দেয়।
পঞ্চমত, উত্তম চরিত্র। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যার চরিত্র ভালো” (বুখারি ও মুসলিম)। উত্তম চরিত্র কিয়ামতের দিন মানুষের ওজনকে ভারী করবে।
অতএব, কিয়ামতের দিন মুক্তি পেতে হলে দুনিয়ায় সৎ আমল করতে হবে। নামাজ, রোজা, সদকা, উত্তম চরিত্র, কোরআন তিলাওয়াত এবং আল্লাহর স্মরণ এ ধরনের আমল মানুষকে আল্লাহর রহমত ও জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে।
thebgbd.com/NIT