ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সেরা সামরিক শক্তির তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-চীন

সামরিক দিক থেকে বিশ্বের কোন দেশ কতটা শক্তিশালী সেই তালিকা প্রকাশ করেছে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’।
  • অনলাইন ডেস্ক | ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫
সেরা সামরিক শক্তির তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-চীন গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স।

মোট ৬০টি আলাদা আলাদা বিষয়কে বিচার-বিশ্লেষণ করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক তালিকা তৈরি করে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’। চলতি সপ্তাহেই সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আর যথারীতি শীর্ষ তিনটি স্থান ধরে রেখেছে তিন পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন। 


তালিকা তৈরিতে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দেখা হয় তা হল সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। এ ছাড়া কোন দেশের কাছে কী কী অত্যাধুনিক হাতিয়ার রয়েছে, তালিকা তৈরির সময়ে সেটিও খতিয়ে দেখে তারা। এ বার মোট ১৪৫টি দেশকে র‌্যাঙ্কিং দিয়েছে এই আন্তর্জাতিক সেনা সমীক্ষক সংস্থা।


২০০৫ সাল থেকে বিশ্বের তাবড় শক্তিশালী দেশগুলির সেনাদের শক্তি সংক্রান্ত তালিকা তৈরি করে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’। প্রথম দিন থেকেই এক নম্বর স্থানটি ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পাওয়ার ইনডেক্স ২০২৫-এ ওয়াশিংটনের প্রাপ্ত পয়েন্ট ০.০৭৪৪। এই সমীক্ষক সংস্থার সূচক অনুযায়ী, যে রাষ্ট্র শূন্যের যত কাছে থাকবে, তার সামরিক শক্তি তত বেশি।


সমীক্ষকদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে ২১ লক্ষ ২৭ হাজার ৫০০ সেনার এক বিশাল বাহিনী। দেশের বাইরে অন্তত ১০০টি সেনাঘাঁটি রয়েছে ওয়াশিংটনের। সেখান থেকে বিশ্বের যে কোনও জায়গায় আক্রমণ করার ক্ষমতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার কোটি ডলার খরচ করেছে এই ‘সুপার পাওয়ার’।

 

‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’-এর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। সমীক্ষকেরা মস্কোকে দিয়েছে ০.০৭৮৮ নম্বর। বিশ্লেষকদের দাবি, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ সামরিক শক্তির সুনাম কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। ক্রেমলিন খুব দ্রুত কিয়েভের পতন ঘটাবে বলে মনে করা হলেও বাস্তবে তা হয়নি।


বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে রাশিয়ার কাছে। সেই সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজারের আশপাশে বলে ধারণা করা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধে আন্তর্মহাদেশীয় হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওরেশনিক’ ব্যবহার করেছে মস্কো। মারণাস্ত্রটি শব্দের প্রায় ১০ গুণ গতিতে নিখুঁত নিশানায় হামলা চালাতে সক্ষম। ফলে পয়েন্ট কিছুটা কমলেও তালিকায় নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে এককালের সোভিয়েত ‘সুপার পাওয়ার’।


রাশিয়ার সমান পয়েন্ট পেয়েও তালিকায় তিন নম্বর স্থান পেয়েছে চীন। বেইজিংয়ের মোট ৩১ লক্ষ ৭০ হাজার সেনা রয়েছে বলে জানিয়েছে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’। শুধু তা-ই নয়, রণতরীর সংখ্যার বিচারে যুক্তরাষ্ট্রকেও টেক্কা দিয়েছে ড্রাগনভূমি। বিশ্বের বৃহত্তম নৌশক্তির তকমা পেয়েছে তারা।


ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করেছে চীন। গত কয়েক বছরে তাদের সামরিক শক্তিও বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আগেই ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান আকাশে উড়িয়েছে পিপল্‌স লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) বিমানবাহিনী। পাশাপাশি শক্তিশালী ড্রোন এবং রকেট বাহিনীও রয়েছে বেজিংয়ের। আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকায় একাধিক সেনাঘাঁটি রয়েছে চীনের।


তালিকায় ভারতের স্থান চতুর্থ। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’-এর সমীক্ষকেরা নয়াদিল্লিকে দিয়েছেন ০.১১৮৪ পয়েন্ট। দেশটির মোট সেনাসংখ্যা ৫১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৫০। গত দু’বছরে পরমাণু অস্ত্রের সম্ভারও বাড়িয়েছে ভারত। তালিকায় পাঁচ, ছয় এবং সাত নম্বর স্থানে রয়েছে যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার মহাশক্তি জাপান পেয়েছে অষ্টম স্থান। তুরস্ক এবং ইতালি যথাক্রমে নয় এবং ১০ নম্বর স্থানে রয়েছে। প্রথম ১০-এ স্থান পাওয়া দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তুরস্ক এবং ইটালি পরমাণু শক্তিধর নয়। পারমাণবিক অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও প্রথম দশে জায়গা পায়নি পাকিস্তান, ইসরায়েল এবং উত্তর কোরিয়া।


পাকিস্তান এই তালিকায় পেয়েছে ১২তম স্থান। ইসলামাবাদের প্রাপ্ত নম্বর ০.২৫১৩। গত বছর আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের সঙ্গে চলা সীমান্ত সংঘর্ষ পাক সেনার র‌্যাঙ্কিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা। একটা সময়ে এই তালিকায় সাত বা আট নম্বর স্থান ধরে রাখত ইসলামাবাদ। এই তালিকায় পাকিস্তানের পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে আরও কয়েকটি কারণের কথা বলেছেন বিশ্লেষকেরা। এর মধ্যে অন্যতম হল ইসলামাবাদের আর্থিক দুরবস্থা। 


‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’-এর সমীক্ষকেরা জানিয়েছেন, সামরিক শক্তির দিক থেকে দুই চিরশত্রু ইরান এবং ইসরায়েল একেবারে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে। তালিকায় তেহরান রয়েছে ১৪ নম্বর স্থানে। তার ঠিক পরেই রয়েছে তেল আবিব।


ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জানিয়েছে, বিশ্ব জুড়ে বেড়েছে নিরাপত্তাহীনতা। এর ফলে ভূরাজনৈতিক সংঘাতের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। গত বছর প্রায় ৬০টি সশস্ত্র সংঘর্ষের ঘটনা রেকর্ড করেছে এই আন্তর্জাতিক সংগঠন। এটি এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফোরামের গবেষকদের দাবি, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে যুদ্ধে নিরীহ নাগরিকদের প্রাণহানির সংখ্যা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলি বেশি পরিমাণে রক্তাক্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।


এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় আকাশচুম্বী হয়েছে। ২০২৩ সালে সামরিক শক্তির পিছনে মোট খরচ হয়েছে ২ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি ডলার।


সূত্র: গার্ডিয়ান


এসজেড