ঢাকা | বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনাকে খুশি করেই ৮৩০টি প্লট হাতিয়ে নেয় যারা

সাবেক রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা, সচিব ও পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ও সন্তানদেরও অসামান্য অবদান কোটায় প্লট দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২১ জানুয়ারি, ২০২৫
শেখ হাসিনাকে খুশি করেই ৮৩০টি প্লট হাতিয়ে নেয় যারা শেখ হাসিনা।

২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে সরকারি চাকরি, জনসেবা ও সমজাতীয় খাতে জাতীয়ভাবে ‘অসামান্য অবদানের’ নামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অথবা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠদের দেওয়া হয় রাজউকের প্লট। রাজউকের পূর্বাচল, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প ও ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে বরাদ্দ হওয়া প্লট পাওয়া ব্যক্তিদের এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন তিন সংসদের ২৫৬ জন সাবেক সংসদ সদস্য, ২২ জন মন্ত্রী, ১২ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩৯ জন সচিব।


শেখ হাসিনার পরিবারের ছয়জন সদস্য, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার সন্তানরাও ১০ কাঠার প্লট পেয়েছেন। এসব প্লটের জন্য কাঠাপ্রতি নির্ধারিত মূল্য ছিল ৩ লাখ টাকা, এখন এসব প্লটের কাঠাপ্রতি বাজারমূল্য কোটি টাকার বেশি। রাজউকের প্লটের আয়তন ৩, ৫, ৭, সাড়ে ৭ ও ১০ কাঠা। সংরক্ষিত কোটায় প্লট পাওয়া কেউ কেউ তা বিক্রিও করে দিয়েছেন।


প্লট বরাদ্দ পাওয়া সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন শাজাহান খান, ফারুক খান, আনিসুল হক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, দীপু মনি, আসাদুজ্জামান খান এবং আরও অনেকে। সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন শামীম ওসমান, নিজাম উদ্দিন হাজারী, হাজী সেলিম, প্রয়াত ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, ওমর ফারুক চৌধুরীসহ অনেকে।


সাবেক রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা, সচিব ও পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ও সন্তানদেরও অসামান্য অবদান কোটায় প্লট দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রভাবশালী অনেক সরকারি কর্মকর্তা এই বরাদ্দ পেয়েছেন।শেখ হাসিনার অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, ব্যক্তিগত সহকারী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অন্তত ১৫ জন গাড়িচালকও পেয়েছেন প্লট।


রাজনীতিবিদ ও আমলাদের বাইরে অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক, ৩০ জন শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী পেয়েছেন প্লট। তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, বিচারপতি, প্রবাসী, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অনেকে। তাঁদের পরিচয় মূলত তারা প্রভাবশালী ও আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত অথবা তোষামোদকারী। কেউ কেউ তদবির করেও প্লট নিয়েছেন।


মুজিব সিনেমায় অভিয়ন করতে এক টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে চিত্রনায়ক আরিফিন শুভও পূর্বাচলে ১০ কাঠার একটি প্লট পেয়েছিলেন। শুভ ছাড়াও অসামান্য অবদান কোটায় অন্তত ৩০ জন শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী রাজউকের প্লট পেয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন মীর সাব্বির মাহমুদ, রানা হামিদ, লিটন হায়দার, রাসেল আশেকী, বেগম মীনা বড়ুয়া, সায়লা সাবরিন, মেহের আফরোজ শাওন ও মাহফুজ আহমেদ।


প্লট পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ‘গডফাদার’, অর্থ আত্মসাৎকারী, ঋণখেলাপি, বিতর্কিত ব্যক্তি এবং সাবেক মন্ত্রী ও সচিবের মেয়ে। রাজউক সূত্র জানিয়েছে, প্লটের জন্য আবেদন করা হতো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। তখন শেখ হাসিনার সম্মতিতেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত হতো কারা কারা প্লট পাবেন। পরে সেই তালিকা পাঠানো হতো মন্ত্রণালয় হয়ে রাজউকে। সংস্থাটির বোর্ড সভায় শুধু কাগুজে অনুমোদন হতো।


এছাড়াও আওয়ামী লীগের বাইরে জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং অন্যান্য দলের নেতারাও এই সুবিধা পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রওশন এরশাদ, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া এবং মাহী বি চৌধুরী।


তোষামদ করে এসব প্লট পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা বেশ দীর্ঘ। রাজউকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর বাইরে আরও প্লট রয়েছে, যেগুলো ‘অসামান্য অবদানের’ নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর তালিকা তৈরির কাজ চলছে।


thebgbd.com/NIT