ঢাকা | বঙ্গাব্দ

চল্লিশ বছর হায়দারাবাদের আসন ধরে রেখেছে ওয়াইসি পরিবার

২০০৪ থেকে হায়দ্রাবাদে ওয়াইসির জয়ের ব্যবধানও ক্রমশই বেড়েছে। প্রথমবার লোকসভা ভোটে লড়ে তিনি জিতেন লাখখানেক ভোটে, আর ২০১৯ সালে সেই মার্জিন বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮২ হাজারে।
  • | ১১ মে, ২০২৪
চল্লিশ বছর হায়দারাবাদের আসন ধরে রেখেছে ওয়াইসি পরিবার আসাদউদ্দিন সালাউদ্দিন ওয়াইসি-কোম্পেলা মাধবীলতা

ভারতের প্রায় সাড়ে চারশো বছরের প্রাচীন শহর হায়দ্রাবাদ। এখানকার আইকনিক চারমিনার, মক্কা মসজিদ ও তার আশেপাশে যে ঘিঞ্জি ‘ওল্ড সিটি’ এলাকা- সেখানে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বাসিন্দাই মুসলিম।

ডেকান মালভূমিতে কুতুব শাহী বংশের প্রতিষ্ঠিত এই নগরীটি দীর্ঘকাল মুঘল ও নিজামদের শাসনে ছিল, ফলে বহু বছর ধরেই হায়দ্রাবাদ ভারতে ইসলামী সংস্কৃতি ও জীবনাচারের একটি প্রধান কেন্দ্রও এটি।

চল্লিশ বছর ধরে একটানা ভারতের পার্লামেন্টে এই হায়দ্রাবাদ আসনটির প্রতিনিধিত্ব করছে ওয়াইসি পরিবার, যারা অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) নামে রাজনৈতিক দলটির প্রতিষ্ঠাতা। শহরে অবশ্য দলটিকে ছোট করে সবাই ‘মজলিস’ নামেই ডাকে। খবর বিবিসির।

১৯৮৪ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত হায়দ্রাবাদের এমপি ছিলেন সুলতান সালাউদ্দিন ওয়াইসি। বয়সের কারণে সক্রিয় রাজনীতি থেকে তিনি সরে দাঁড়ানোর পর গত বিশ বছর হায়দ্রাবাদের এমপি তারই বড় ছেলে, আসাদউদ্দিন সালাউদ্দিন ওয়াইসি।

এবারও তিনি ওই একই আসনে লড়ছেন, আর ঘটনাচক্রে শহরে ভোটগ্রহণের দিনটিতেই সোমবার (১৩ মে) ওয়াইসি ৫৫- এ পা রাখছেন।

২০০৪ থেকে হায়দ্রাবাদে ওয়াইসির জয়ের ব্যবধানও ক্রমশই বেড়েছে। প্রথমবার লোকসভা ভোটে লড়ে তিনি জিতেন লাখখানেক ভোটে, আর ২০১৯ সালে সেই মার্জিন বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮২ হাজারে।

বিগত দুই দশকে ওয়াইসি হায়দ্রাবাদেই শুধু নিজেকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলেননি, সমগ্র ভারতেও মুসলিম সমাজের অন্যতম প্রধান একজন নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।

অযোধ্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিতর্কিত রায়, তিন তালাক নিষিদ্ধ করতে পার্লামেন্টে আইন, জঙ্গি সন্দেহে মুসলিম যুবকদের বিনা বিচারে আটকে রাখা কিংবা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি) চালু করার উদ্যোগ– মুসলিম সমাজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এমন অজস্র ইস্যুতে যিনি সবার আগে বা সব চেয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তিনি অবশ্যই আসাদউদ্দিন ওয়াইসি।

কেউ কেউ এমনও বলেন, একদা ভারতীয় মুসলিমদের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডকেও এককভাবে ছাপিয়ে গেছেন এই একজন রাজনীতিবিদ। তবে রাজনৈতিক স্তরে তার সমালোচনাও আছে বিস্তর।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি স্থির করেছে, তারা হায়দ্রাবাদ আসনে আসাদউদ্দিন ওয়াইসিকে কিছুতেই ‘ওয়াকওভার’ দেবে না।

দেশে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ারও আনেক আগে তারা ঘোষণা করেছে, হায়দ্রাবাদ আসনে ওয়াইসির বিরুদ্ধে লড়বেন সমাজকর্মী, শিল্পপতি ও ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী কোম্পেলা মাধবীলতা – যিনি রাজনীতিতে একেবারেই নবাগত।

হায়দ্রাবাদের মতো হাই-প্রোফাইল আসনে তিনি কীভাবে বিজেপির মনোনয়ন পেলেন তা খুব একটা স্পষ্ট নয়।

তবে মাধবীলতার নাম ঘোষণার পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদি তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন, আরএসএস ক্যাডাররা মাধবীলতার প্রচারে দিনরাত এক করে দিচ্ছেনএবং হায়দ্রাবাদ কেন্দ্রে বিজেপি যেরকম উজ্জীবিত ও প্যাশনেট ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে তা আগে কখনো দেখা যায়নি।

এই প্রচারণায় খুব সূক্ষ্মভাবে হিন্দুত্বের তাকমা যেমন ব্যবহার করা হচ্ছে, তেমনি বিশেষ করে মুসলিম নারী ভোট টানতেও মাধবীলতা চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছেন না।

এরই মধ্যে রামনবমীর মিছিল থেকে আকাশে ছোড়া মাধবীলতার একটি ‘কাল্পনিক তিরে’র নিশানা ছিল রাস্তার পাশের একটি মসজিদ– এমন একটি অভিযোগকে ঘিরেও তোলপাড় পড়ে গেছে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, যার জেরে পুলিশ স্টেশনেও হাজিরা দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী।