মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত অবৈধ অভিবাসন বিরোধী আইনে অনুমোদন দিয়েছে রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। সন্দেহভাজন বিদেশি অপরাধীদের বিচার পূর্ব কারাবাসের মেয়াদ বাড়ানোর একটি বিলও কংগ্রেস অনুমোদন করেছে। কংগ্রেসের অনুমোদন লাভের পর সিনেটে ৬৫-৪৫ ভোটে অবৈধ অভিবাসন বিরোধী আইনটি সহজেই পাশ হয়। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি আজ এই খবর জানায়।
‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কংগ্রেসের অনুমোদন লাভের পর অবৈধ অভিবাসী বিরোধী ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে ৪ বাংলাদেশিসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত কারো কাছেই বৈধ কাগজপত্র নেই। এদের মধ্যে একজন গ্রিসের ও অন্যজন ভেনেজুয়েলার নাগরিক। তারা দুইজনই হত্যা মামলার আসামী। নিউইয়র্কের ব্রুকলিন বরোর ফুলটন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় চার বাংলাদেশিকে।
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন এক এক্স বার্তায় বলেছেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের অবশ্যই আটক করা হবে এবং তাদেরকে কখনও আর আমাদের দেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। মার্কিনিরা নিরাপত্তা দাবি করে এবং নিরাপত্তা দাবির অধিকারও তাদের রয়েছে।’ অভিবাসী ধরপাকড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে স্কুল-গির্জা-হাসপাতালেও। সংবেদনশীল এই স্থানগুলোতে অভিবাসী আটক কার্যক্রমের ওপর থেকে এক দশকের বেশি সময়ের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে সেসব স্থানে ধরপাকড়ে আর কোনো বাধা নেই। এই সিদ্ধান্তে আতঙ্কিত অভিবাসীরা।
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাল বিলম্ব করেননি নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ নিয়েই শক্ত হাতে অবৈধ অভিবাসী দমন শুরু করেছেন তিনি। ধরপাকড় শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নানা অঙ্গরাজ্যে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। পরিচয়পত্র দেখাতে অস্বীকৃতি জানানোয় ৪ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট-আইস। এ ঘটনার পর বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার সড়ক ও রেস্তোরাঁয় লোকজনের ভিড় নেই বললেই চলে। চরম আতঙ্কে বৈধ কাগজপত্র বিহীন অভিবাসীরা।
এদিকে এখন থেকে স্কুল, গির্জা এমনকি হাসপাতালগুলোতেও অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। আইস এবং কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন সংস্থাগুলোর ওপর গেলো এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এসব স্থানে অভিযান পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করাসহ জারি করা হয় নতুন নির্দেশনা। এতে বলা হয় স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে যাতে কেউ লুকিয়ে না থাকতে পারে তাই এ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়। অপর নির্দেশনায় বলা হয়, বৈধ কাগজপত্র না থাকা কেউ গ্রেপ্তার হলে সেই ব্যক্তি যদি যুক্তরাষ্ট্রে দুই বছরের বেশি সময় ধরে তার অবস্থান করার প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে দ্রুতই দেশ থেকে বের করে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে গ্রেফতারের অনুমতি দেয়ার ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে সতর্ক করেছেন আইনজীবীরা। সেন্টার ফর ল অ্যান্ড সোশ্যাল পলিসি এক বিবৃতিতে জানায়, এই পদক্ষেপের কারণে অভিবাসীদের পরিবার ও তাদের সন্তানের পাশাপাশি মার্কিন শিশুরাও মারাত্মক মানসিক চাপের সম্মুখীন হতে পারে।
এছাড়া, এরমধ্যেই মেক্সিকো সীমান্তে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। নিশ্চিত করা হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই আদেশের আওতায় অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার একটি প্রকল্পও বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষীরা।
সূত্র: এএফপি, স্কাই নিউজ
এসজেড