ঢাকা | বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহারে ইসরায়েলের ‘গড়িমসি’

নেতানিয়াহুর দপ্তর শুক্রবার জানিয়েছে, সেনা প্রত্যাহার রোববারের সময়সীমার পরেও অব্যাহত থাকবে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫
দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহারে ইসরায়েলের ‘গড়িমসি’ লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক।

লেবাননের সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, তারা দেশের দক্ষিণ অংশে মোতায়েন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকলেও ইসরায়েলি বাহিনী সেখান থেকে সরে যেতে ‘গড়িমসি’ করছে। ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার একদিন আগে এ অভিযোগ করা হলো। লেবাননের রাজধানী বৈরুত থেকে এএফপি এ খবর জানায়।


নভেম্বর ২৭ তারিখে কার্যকর হওয়া ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী লেবাননের সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে দেশের দক্ষিণে মোতায়েন হবে এবং ইসরায়েলের সেনাবাহিনী রোববার শেষ হতে যাওয়া ৬০ দিনের সময়সীমার মধ্যে দক্ষিণ অঞ্চল থেকে সরে আসবে। চুক্তি অনুযায়ী, হিজবুল্লাহকে লিতানি নদীর উত্তরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার (২০ মাইল) ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে সরে দাঁড়াতে হবে এবং দক্ষিণে অবশিষ্ট সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে হবে।


লেবাননের সেনাবাহিনী শনিবার (২৫ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারে গড়িমসির কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে বিলম্ব হয়েছে। তারা বাহিনী প্রত্যাহার শেষ করলেই আমরা মোতায়েন অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত।’


ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর শুক্রবার জানিয়েছে, সেনা প্রত্যাহার রোববারের সময়সীমার পরেও অব্যাহত থাকবে। নেতানিয়াহুর দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘লেবাননের সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবাননে সম্পূর্ণ এবং কার্যকরভাবে চুক্তি কার্যকর না করা পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া ধীরে গতিতে চলবে এবং তা সম্পূর্ণভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে হবে।’


যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স যুদ্ধবিরতি কার্যকরের জন্য মধ্যস্থতা করেছে এবং তার বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ফোনালাপে লেবাননের নতুন প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন বলেছেন, ‘দক্ষিণে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ইসরায়েলকে চুক্তির শর্তাবলি মেনে চলতে বাধ্য করা দরকার।’ ম্যাক্রোঁর কার্যালয় জানিয়েছে, ফরাসী প্রেসিডেন্ট লেবানন যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে তাদের প্রতিশ্রুতি দ্রুত পূরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।


আউন গত সপ্তাহে বলেছেন, ‘ইসরায়েলকে নভেম্বর ২৭ তারিখে হওয়া চুক্তির সময়সীমা অনুযায়ী দক্ষিণের অধিকৃত এলাকা থেকে সরে যেতে হবে।’ লেবাননের সেনাবাহিনী লোকজনকে সতর্ক করে বলেছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনী রেখে যাওয়া মাইন ও সন্দেহজনক বস্তুগুলোর কারণে দক্ষিণ সীমান্ত এলাকাগুলোতে যাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন।’ 


লেবাননের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা এনএনএ জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকাগুলো থেকে বাস্তুচ্যুত কিছু মানুষকে একটি আন্তর্জাতিক ফোন কলের মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে। এতে একজন ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্রের পরিচয় দিয়ে তাদের ঘরে না ফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়। এনএনএ আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনা সীমান্তের কয়েকটি গ্রাম সিল করে দিয়েছে এবং সেখানে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে একজন স্থানীয় বাসিন্দা ইসরায়েলি সেনার গুলিতে আহত হয়েছেন।


একটি লেবাননি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ‘অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, চুক্তি বাস্তবায়নে ইসরায়েলের ব্যর্থতার গুরুতর প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং নির্ধারিত সময়সীমা মেনে চলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।’ একটি লেবাননি সামরিক সূত্র জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী ‘জানুয়ারির প্রথমদিকে পশ্চিমাঞ্চল থেকে তাদের প্রত্যাহার সম্পন্ন করেছে,’ কিন্তু ‘মধ্যাঞ্চল থেকে প্রত্যাহার বিলম্বিত হওয়ার কারণে পূর্বাঞ্চল থেকেও তারা পুরোপুরি সরে যায়নি।’


হিজবুল্লাহ বৃহস্পতিবার সতর্ক করে বলেছে, ‘৬০ দিনের সময়সীমা লঙ্ঘন করা হলে তা চুক্তির শর্তাবলির স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এটি লেবাননের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানবে।’ তারা আরও জানিয়েছে, ‘অধিকৃত ভূমি পুনরুদ্ধার এবং দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে লেবাননকে সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’


ইসরায়েল, লেবানন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী ইউনিফিলের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি যেকোনো যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের বিষয়টি নিশ্চিত ও সমাধান করতে কাজ করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের বিষয়ে ইসরায়েলি কর্মকাণ্ড শনাক্ত করেছে। 


সূত্র: এএফপি


এসজেড