স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর তার শাষণামলে নিষিদ্ধ হওয়া সিরিয়ার কারাগারে নির্যাতনের বর্ণনামূলক বা কট্টোর ইসলামী ধর্মতত্ত্বের উপর লেখা বই এখন দামেস্কের বইয়ের দোকানে খোলামেলাভাবে পাওয়া যাচ্ছে। দামেস্ক থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দোকানে আগত ২৫ বছর বয়সী ছাত্র আমর আল-লাহাম বলেন, ‘যদি মাত্র দুই মাস আগে একটি (নির্দিষ্ট) বই সম্পর্কে জানতে চাইতাম, তাহলে নিখোঁজ হতে পারতাম অথবা কারাগারে যেতে হতো।’ অবশেষে তিনি সিরিয়ার লেখক হানান আসাদের লেখা ‘আল-মাবার’ (দ্য প্যাসেজ) বইটির একটি কপি খুঁজে পেয়েছেন।
বইটিতে ২০১৬ সালে আসাদের বাহিনী সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের আগে বিদ্রোহী-অধিকৃত পূর্ব এবং সরকার-অধিকৃত পশ্চিমের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের একটি ক্রসিং পয়েন্ট আলেপ্পোর সংঘাতের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। লাহাম বলেন, ‘আগে, আমরা বামপন্থী বা অতি-রক্ষণশীল সালাফি মুসলিম আন্দোলনের বইসহ অন্যান্য বই কেনার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দ্বারা চিহ্নিত হওয়ার ভয় পেতাম।’
২০১১ সালে আসাদ সরকারবিরোধী একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ নির্মমভাবে দমনের পর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটিতে যদিও অনেকে বলছেন, আসাদের পতনের পর ভবিষ্যত অনিশ্চিত, তবে, সর্বব্যাপী নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে সিরিয়ার নাগরিকেরা এখন আরও স্বাচ্ছন্দ্যে শ্বাস নিতে পারছেন। আসাদ যে কোনও ভিন্নমতের ইঙ্গিতকে নির্মমভাবে দমন করতেন এবং তার আগে তার বাবা হাফেজও একই কাজ করেছেন। ১৯৮০-এর দশকে মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহকে চরমভাবে দমন করেন।
অনেক বই যা আগে নিষিদ্ধ ছিল। সেসব বই এখন প্রায়শই ফুটপাতের প্রদর্শনীতে বা বইয়ের দোকানে দেখা যাচ্ছে। এসব বইয়ের মধ্যে রয়েছে সিরিয়ার লেখক মুস্তফা খলিফার ‘দ্য শেল’। যেটি মূলত একজন নাস্তিকের বিপর্যয়ের কাহিনী, যাকে ভুল করে একজন উগ্র ইসলামপন্থী মনে করে সিরিয়ার কুখ্যাত তাদমুর কারাগারে বছরের পর বছর ধরে আটক রাখা হয়। আরেকটি বই হল ইরাকি লেখক আহমেদ খাইরি আলোমারির ‘আমার খালার বাড়ি’। সিরিয়ানরা কারাগার বোঝাতে যে অভিব্যক্তিটি ব্যবহার করে।
বইয়ের দোকান মালিক আবু ইয়ামেন এএফপিকে বলেন, কারাগারের সাহিত্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। আগে, মানুষ প্রশ্ন করার সাহসও করতো না। তারা জানত তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে। একটি উচ্চস্তরের প্রকাশনা সংস্থার মালিক বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে তিনি কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সমস্ত রাজনৈতিক রচনা মুদ্রণ বন্ধ করে দিয়েছেন। ইসলামী ধর্মতত্ত্বের ২৫ বছর বয়সী ছাত্র বলেন, বিপ্লবের সময়, আমরা কিছু বই খুঁজতে ভয় পেতাম। সেগুলো কাছে রাখতে পারতাম না, অনলাইনে পড়তাম।
সূত্র: এএফপি
এসজেড