এটি মূলত তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়, যা ইসলামের প্রচার ও প্রসারের এক অনন্য মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভী (রহ.) ১৯২৬ সালে ভারতে এই দাওয়াতি আন্দোলনের সূচনা করেন। তার লক্ষ্য ছিল সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে দ্বীনের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া এবং ইসলামের মূল আদর্শ অনুসারে জীবন পরিচালনার জন্য উদ্বুদ্ধ করা।
বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৪০-এর দশকে। এরপর ১৯৫৪ সালে ঢাকার কাকরাইল মসজিদকে তাবলিগ জামাতের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। সেখান থেকেই দেশব্যাপী দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে।
বিশ্ব ইজতেমার মূল আয়োজন শুরু হয় ১৯৪৬ সালে। প্রথমদিকে এটি ঢাকার কাকরাইল মসজিদে ছোট পরিসরে অনুষ্ঠিত হতো। তবে মুসল্লিদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৯৬৭ সালে গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদের তীরে এটি স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকেই বিশ্ব ইজতেমা বৃহৎ পরিসরে আয়োজন করা হয় এবং এটি ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী প্রসার লাভ করে।
বিশ্ব ইজতেমা মূলত তাবলিগ জামাতের ছয়টি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়:
১. কালিমা – তাওহিদ ও রিসালাতের বাণী প্রচার।
২. নামাজ – নিয়মিত সালাত আদায়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।
৩. ইলম ও জিকির – ইসলামের জ্ঞান অর্জন এবং আল্লাহর স্মরণ।
৪. ইকরামুল মুসলিমিন– মুসলমানদের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন।
৫. ইখলাস– সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা।
৬. দাওয়াত ও তাবলিগ– ইসলামের প্রচার ও প্রসার করা।
বিশ্ব ইজতেমা তিন দিনব্যাপী আয়োজিত হয়। এতে মুসল্লিরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা শোনেন, আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করেন। আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে ইজতেমার সমাপ্তি হয়, যেখানে লাখো মুসল্লি দোয়া করেন।
প্রতিবছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মুসলমান বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন। এটি হজের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে এবং বর্তমানে এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শিক্ষা ও আত্মশুদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত।