২৭ বছর আগে আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান এক ব্যক্তি। তাকে পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দিল প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলা। অপেক্ষায় থাকা স্ত্রী খুঁজে পেলেন তার স্বামীকে। মেলা হয়ে উঠল পরিবারের মিলনস্থল। নিখোঁজ হয়ে যাওয়া পরিবারের অভিভাবককে কাছে পেয়ে খুশির বাঁধ ভাঙল পরিবারের। বাবাকে কাছে পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন সন্তানেরাও।
ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা গঙ্গাসাগর যাদব, বর্তমানে বয়স ৬৫। তিনি ‘অঘোরি’। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘বাবা রাজকুমার’। তবে পরিবার তাকে চিনতে পারলেও গঙ্গাসাগর কিন্তু ফেলে আসা জীবন, সংসার সব কিছুই অস্বীকার করেছেন। নিজেকে বারাণসীর বাসিন্দা বলেই দাবি করছেন। তবে পরিবারের দাবি, ‘বাবা রাজকুমার’ যতই নিজেকে গঙ্গাসাগর মানতে অস্বীকার করুক না কেন, তিনিই যে ঝাড়খণ্ডের গঙ্গাসাগর, সে বিষয়ে নিশ্চিত পরিবার।
গঙ্গাসাগরের স্ত্রী ধানোয়া দেবী, দুই পুত্র কমলেশ এবং বিমলেশ। যদি কুম্ভমেলায় গঙ্গাসাগরকে খুঁজে পাওয়া যায়, এই আশা নিয়েই প্রয়াগরাজে আসেন। ধানোয়া দেবীর দাবি, আশা করতে পারেননি, কুম্ভমেলাই হয়ে উঠবে পরিবারের মিলনস্থল। গঙ্গাসাগরের পুত্ররা জানান, কুম্ভমেলার পুলিশকে ঘটনাটি জানানো হয়েছে। গঙ্গাসাগরের ডিএনএ পরীক্ষা করানোর আর্জিও জানিয়েছেন। গঙ্গাসাগরের এক আত্মীয় মুরলী যাদব বলেন, ‘মেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব। যদি ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা যায়, এই ব্যক্তি গঙ্গাসাগর নন, তা হলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব।’
ধানোয়া দেবী জানিয়েছেন, ১৯৯৮ সালে পাটনায় যান গঙ্গাসাগর। আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। তার কথায়, ‘আমার স্বামীর গবাদি পশুর ব্যবসা ছিল। একদিন হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। অনেক খুঁজেছি। মনে মনে বিশ্বাস করতাম, এই বুঝি ফিরে এল। তাই তার অপেক্ষায় থাকতাম। এক আত্মীয় কুম্ভমেলায় এসে এক ব্যক্তির ছবি তুলে পাঠান। সাধুর বেশে ওই ব্যক্তির শারীরিক গঠন, চোখ মুখের গড়ন দেখে নিশ্চিত হই, এই ব্যক্তিই আমার হারিয়ে যাওয়া স্বামী।’ তারপরই দুই পুত্রকে নিয়ে প্রয়াগরাজে হাজির হন ধানোয়া। মেলা ঘুরে খুঁজে বার করেছেন।
ধানোয়া বলেন, ‘স্বামীকে এই বেশে দেখব ভাবিনি। না চেনার ভান করছেন। শুধু শিবমন্ত্র জপে যাচ্ছেন।’ গঙ্গাসাগরের মা বলেন, ‘ছেলে বাড়ি ফিরে আসুক। এটাই চাই।’ এই ব্যক্তিই যে গঙ্গাসাগর তা কী ভাবে চিনলেন? ধানোয়া দেবী বলেন, ‘স্বামীর দাঁত, কপালে কাটা চিহ্ন, হাঁটুর একটি দাগ দেখেই চিনতে পেরেছি।’ তবে ধানোয়া দেবীরা গঙ্গাসাগর বলে যাকে দাবি করছেন, সেই ব্যক্তি আদৌ ঝাড়খণ্ডের গঙ্গাসাগর কি না, তা ডিএনএ পরীক্ষার পরই স্পষ্ট হবে। এখন মেলা শেষের অপেক্ষায় ধানোয়া দেবীরা।
সূত্র: এনডিটিভি
এসজেড