শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যদিও কিছু হাদিসকে দুর্বল বা জয়িফ বলা হয়, তবে সম্মিলিতভাবে এগুলো থেকে বোঝা যায় যে শবে বরাত একটি ফজিলতপূর্ণ রাত।
নিম্নে এ সম্পর্কিত কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো:
১. আল্লাহ বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শাবানের পনেরোতম রাতে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন এবং বনু কালব গোত্রের বকরির লোমের সংখ্যার চেয়েও বেশি সংখ্যক মানুষকে ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি: ৭৩৯, ইবনে মাজাহ: ১৩৮৯)
২. মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারীদের ক্ষমা করা হয় না: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন শাবানের মধ্য রজনী আসে, তখন আল্লাহ তাআলা সমস্ত সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ: ১৩৯০)
৩. রাসুল (সা.) শবে বরাতে ইবাদত করতেন: একটি বর্ণনায় আছে, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি রাসুল (সা.)-কে খুঁজতে বের হলাম এবং দেখি, তিনি জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে আছেন। তিনি বললেন, ‘শাবানের মধ্য রজনীতে আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বনু কালব গোত্রের বকরির লোমের সংখ্যার চেয়েও বেশি সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৬০০৬, বায়হাকি: ৩৮৩৫)
৪. শবে বরাত ও রোযা: হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন শাবানের ১৫তম রাত আসে, তখন তোমরা রাতে ইবাদত করো এবং দিনে রোযা রাখো। কেননা এ রাতে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং ফজর পর্যন্ত বলেন: ‘কেউ কি ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে? আমি তাকে ক্ষমা করব। কেউ কি রিযিক চাওয়ার আছে? আমি তাকে রিযিক দেব।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)
হাদিসগুলোর গ্রহণযোগ্যতা
শবে বরাত নিয়ে উল্লেখিত হাদিসগুলোর মধ্যে কিছু সহিহ বা হাসান এবং কিছু দুর্বল (জয়িফ) বলে হাদিস বিশারদরা মত দিয়েছেন। তবে একাধিক হাদিসের ভিত্তিতে বোঝা যায়, এই রাতটি ফজিলতপূর্ণ এবং ইবাদতের জন্য বিশেষ সুযোগের রাত।
অনেক ইসলামিক স্কলার বলেন, যদিও হাদিসগুলোর কিছু দুর্বলতা আছে, তবে সম্মিলিতভাবে এগুলো গ্রহণযোগ্য। তাই ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত করা ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ভালো কাজ।
তবে কোনো নির্দিষ্ট ইবাদত, বিশেষ নামাজ বা হালুয়া-রুটি খাওয়ার মতো কিছু বাধ্যতামূলক করা বিদআত বলে গণ্য হবে।
শেষ কথা
শবে বরাত ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত, যেখানে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন। এ রাতে নফল ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও ইস্তিগফার করা উত্তম। তবে বিদআত ও অতিরঞ্জন এড়িয়ে চলা উচিত।
thebgbd.com/NIT