প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি কটাক্ষ করে মস্কোর আক্রমণের জন্য তাকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া আলোচনার পর যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য একটি চুক্তির ব্যাপারে তিনি আরো আত্মবিশ্বাসী। ওয়াশিংটন এরই মধ্যে রাশিয়ার প্রতি দেশটির অবস্থান পরিবর্তন করেছে, যা ইউরোপীয় নেতাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাম বিচ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
সৌদি আরবে আলোচনা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ করার জন্য ইউক্রেনীয়দের তিরস্কার করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মাসের শেষের দিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠক করতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্টে ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘খুবই হতাশ, শুনেছি তারা আসন না পাওয়ায় বিরক্ত।’ তিন বছর আগে দেশটিতে রাশিয়ার আক্রমণের জন্য ইউক্রেন দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিয়েভ সংঘাত এড়াতে একটি চুক্তি করতে পারত। ট্রাম্প বলেন, ‘আপনাদের কখনই এটি শুরু করা উচিত হয়নি।’
জেলেনস্কি এর আগে মঙ্গলবার কিয়েভকে বাদ দেওয়ার জন্য মার্কিন-রাশিয়া আলোচনার সমালোচনা করে বলেন, যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টা ‘ন্যায্য’ হতে হবে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে তাতে রাখতে হবে, পাশাপাশি তিনি সৌদি আরব সফর স্থগিত করেন। ইউক্রেনীয় নেতার মন্তব্য ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
ট্রাম্প ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে কিয়েভের লড়াইয়ের নেতৃত্বদানকারী জেলেনস্কির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সমালোচনা করছেন। রাশিয়া চুক্তির যে কোনো অংশ হিসেবে জেলেনস্কিকে নতুন নির্বাচনের জন্য বাধ্য করতে চায়, সেই দাবিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে কিনা জানতে চাইলে ট্রাম্প ইউক্রেনের অনুমোদনের রেটিং সম্পর্কে তার সমালোচনা শুরু করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘তারা টেবিলে একটা আসন চায়, কিন্তু ইউক্রেনের জনগণের কি এমন কোনো বক্তব্য থাকবে না যে অনেক দিন হয়ে গেছে আমাদের নির্বাচন হয়নি। এটা রাশিয়ার ব্যাপার নয়, এটা আমার কাছে অন্য দেশ থেকে আসা কথা।’ জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন, কিন্তু ইউক্রেন এখনও সামরিক আইনের অধীনে থাকায় তিনি পদে বহাল আছেন।
ক্ষমতা গ্রহণের আগেই এই যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প। তবে ইউরোপীয় নেতারা ক্রমশ ভীত হচ্ছেন ট্রাম্প, ইউক্রেন চুক্তির পেছনে রাশিয়াকে অনেক বেশি ছাড় দিচ্ছেন। কিন্তু ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, তার একমাত্র লক্ষ্য হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বৃহত্তম স্থলযুদ্ধটির অবসান ঘটানো।
ট্রাম্প বলেন, আলোচনার পর তিনি একটি চুক্তির ব্যাপারে ‘অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী’, তিনি রাশিয়াকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তারা খুব ভালো। রাশিয়া কিছু একটা করতে চায়। তারা বর্বরতা বন্ধ করতে চায়।’ ডোল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘মনে করি, এই যুদ্ধ শেষ করার ক্ষমতা আমার আছে এবং মনে করি, খুব ভালোভাবে এর প্রচেষ্টা চলছে।’
মার্কিন নেতা আরো বলেন, যদি তিনি যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেন, তাহলে তিনি ইউক্রেনে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষীদের ‘সর্বাত্মক’ সমর্থন করবেন। তিনি বলেন, ‘ফ্রান্স এটা করতে ইচ্ছুক জানি এবং মনে করি, তাদের একটা সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।’ ব্রিটেনও একই রকম প্রস্তাব দিয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কারণ, আপনারা জানেন, আমরা অনেক দূরে।’
ট্রাম্প গত সপ্তাহে ঘোষণা করেন তিনি পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং দুই নেতা শান্তি আলোচনা শুরু করতে মস্কো ও ওয়াশিংটনে পরস্পরিক বৈঠক করতে সম্মত হয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তারা প্রথম বৈঠক করবেন, সম্ভবত সৌদি আরবে। তার এ ঘোষণা বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। যদিও তাদের বৈঠকের কোনও তারিখ ঘোষণা করা হয়নি, তবে মাসের শেষের দিকে তিনি পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন কিনা জানতে চাইলে ট্রাম্প এর সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন।
সূত্র: এএফপি
এসজেড