২০২৪ সালে ভয়ঙ্কর উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে ৯৭৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দু’টি মানবাধিকার সংগঠন একথা জানিয়েছে। নরওয়ে-ভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) এবং ফরাসি গ্রুপ টুগেদার অ্যাগেইনস্ট দ্য ডেথ পেনাল্টি (ইসিপিএম) জানিয়েছে, ইরান গত বছর কমপক্ষে ৯৭৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। যা মৃত্যুদণ্ডের ‘ব্যাপক বৃদ্ধি’। উভয় সংগঠন বলেছে, ২০০৮ সালে আইএইচআর ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রেকর্ড শুরু করার পর থেকে এই সংখ্যাটি সর্বোচ্চ। প্যারিস থেকে এএফপি আজ এই খবর জানায়।
এক যৌথ প্রতিবেদনে বলেছে, তারা ইরানকে ‘রাজনৈতিক নিপীড়নের কেন্দ্রীয় হাতিয়ার’ হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে বেছে নিয়েছে। যৌথ প্রতিবেদনে এই পরিসংখ্যান ‘২০২৪ সালে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে মৃত্যুদণ্ডের কার্যকরের ‘ব্যাপক বৃদ্ধি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে’।
আইএইচআর পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোঘাদ্দাম বলেছেন, ‘এই মৃত্যুদণ্ডলো ক্ষমতার দাপট বজায় রাখার জন্য নিজস্ব জনগণের বিরুদ্ধে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের যুদ্ধেরই একটি অংশ। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের হুমকি বৃদ্ধি পাওয়ায় বছরের শেষ তিন মাসে প্রতিদিন গড়ে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের এই সংখ্যা ২০২৩ সালে রেকর্ড করা ৮৩৪টি মৃত্যুদণ্ডের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। যে ৯৭৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তার মধ্যে চারজনকে জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৩১ জন নারী।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলেছে, চীনের পরে ইরান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। জনসাধারণের মধ্যে ভয়-ভীতি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অভিযোগ করেছে, বিশেষ করে ২০২২ সালে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবে পশ্চিমা-সমর্থিত শাহকে উৎখাতের পর প্রতিষ্ঠিত শরিয়া-ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে মৃত্যুদণ্ড এখনো বিদ্যমান। মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধের মধ্যে রয়েছে খুন, ধর্ষণ এবং মাদক সংক্রান্ত অপরাধ, তবে ‘বিশ্বে দুর্নীতি’ এবং ‘বিদ্রোহ’ এর মতো আরো অস্পষ্ট অভিযোগ, যা মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বেশিরভাগ কারাগারের আঙ্গিনায় ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। যদিও অন্যান্য পদ্ধতি আইনে রয়েছে তবে মাঝে মাঝে জনসমক্ষেও ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ইরানের বাধ্যতামূলক পোশাকবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ইরানি-কুর্দি নারী মাহশা আমিনির হেফাজতে মৃত্যুর পর দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার কারণে গত বছর দু’জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
বিক্ষোভের সময় গাড়ি চালিয়ে একজন পুলিশ অফিসারকে হত্যার অভিযোগে ২৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ ঘোবাদলুর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো অভিযোগ করেছে, তার বিচার অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ ছিল। বিচারকরা আসামিপক্ষের উপস্থাপিত প্রমাণ উপেক্ষা করেছেন যে তিনি বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন। বিক্ষোভের সময় একজন বিপ্লবী গার্ডকে হত্যার অভিযোগে ৩৪ বছর বয়সী গোলামরেজা রাসাই’র আগস্ট মাসে গোপনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, নির্যাতনের মাধ্যমে তার স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, ইরান গত বছর আরো বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে এমন প্রমাণ রয়েছে যা তারা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি। তারা বলেছে, ২০২৪ সালে আরো ৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার খবর পাওয়া গেছে। আইএইচআর বলেছে, ইতোমধ্যে চলতি বছর অন্তত ১২১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
সূত্র: এএফপি
এসজেড