ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের ব্যাপারে যে কোনো আলোচনায় রাশিয়ার শক্তিশালী অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আলোচনার ‘তাসগুলো' রাশিয়ানদের হাতে রয়েছে’। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নির্বাচন আয়োজন করতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকে ‘স্বৈরশাসক’ আখ্যা দেওয়ার পর বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন মন্তব্য করেন। কিয়েভ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
যুদ্ধের বিষয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন আনার পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতন্ডা করা ইউক্রেনীয় নেতার সঙ্গে বৃহস্পতিবার কিয়েভে মার্কিন বিশেষ দূত কিথ কেলগের দেখা করার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় তহবিল ও অস্ত্র সরবরাহ করেছে, কিন্তু ট্রাম্প মস্কোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে কিয়েভ ও তার ইউরোপীয় সমর্থকদের বিচলিত করেছেন, কারণ তারা আশঙ্কা করছেন যে তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য শর্তে যুদ্ধ শেষ হতে পারে।
ট্রাম্প বুধবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মনে করি, রাশিয়ানরা যুদ্ধের অবসান দেখতে চায়। কিন্তু আমার মনে হয়, তাদের হাতে এ সংক্রান্ত তাসগুলো একটু বেশিই রয়েছে। কারণ, তারা বিশাল অঞ্চল দখলে নিয়েছে, সুতরাং, তাদের হাতে এ তাসগুলো রয়েছে।’
ট্রাম্প ইউক্রেনীয় এই নেতার কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। তিনি দাবি করেছেন যে জেলেনস্কি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন এবং তিন বছর আগে রাশিয়ার সর্বত্মক আক্রমণের মাধ্যমে শুরু হওয়া যুদ্ধটি শুরু করার জন্য তিনি তাকেই দায়ী করেছেন। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পাঁচ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হন। তার দেশ অস্তিত্বের লড়াইকালে সামরিক আইন জারি করে। সামরিক আইনের অধীনে তিনি নেতা হিসেবে বহাল রয়েছেন।
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে তীব্র আক্রমণাত্মক ভাষায় বলেন, ‘তিনি নির্বাচন করতে অস্বীকৃতি জানান, ইউক্রেনীয় জরিপে তিনি খুবই নিম্নমানের নেতা এবং তিনি যে জিনিসটিতে দক্ষ ছিলেন তা হল (জো) বাইডেনকে ‘বেহালার মতো’ বাজানো। আমরা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসানের জন্য সফলভাবে আলোচনা করছি। সকলেই স্বীকার করে যে কেবল ট্রাম্প এবং ট্রাম্প প্রশাসনই তা করতে পারে।’
কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সোসিওলজি (কেআইআইএস) জানায়, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে, কিন্তু সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে তাকে বিশ্বাস করে এমন ইউক্রেনীয়দের হার কখনো ৫০ শতাংশের নিচে নেমে যায়নি। ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বক্তব্য ইউরোপকে হতবাক করেছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলৎজ বলেছেন, জেলেনস্কিকে একজন স্বৈরশাসক বলা ‘ভুল ও বিপজ্জনক’।
ওয়াশিংটনে, ট্রাম্পের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও ট্রাম্পের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট, ইউক্রেন এই যুদ্ধ ‘শুরু’ করেনি। রাশিয়া একটি অপ্রীতিকর এবং নৃশংস আক্রমণ শুরু করেছে যার ফলে লাখো লাখো মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।’
ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জেলেনস্কি তাকে রাশিয়া প্রদত্ত ‘ভুল তথ্যের কাছে নতি স্বীকার করার অভিযোগ এনেছেন। তিনি নতুন মার্কিন প্রশাসনের প্রতি তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুতিনকে বছরের পর বছর ধরে বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছে।’ তুষার জমে থাকা কিয়েভের রাস্তায় সৈনিক ইভান বানিয়াস এএফপিকে বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু করার জন্য ইউক্রেনকে দোষারোপ করা এক ধরণের অযৌক্তিকতা। ইউক্রেনীয় হিসেবে, আমরা এটি বুঝতে পারছি না।’
এদিকে, পুতিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন। পুতিন তার জন্মস্থান সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি ড্রোন তৈরির কারখানা পরিদর্শন করার সময় সাংবাদিকদের বলেন, এই আলোচনা ‘পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ পুনরুদ্ধারের প্রথম পদক্ষেপ ছিল।’ রুশ নেতা আরো দাবি করেছেন, তার সৈন্যরা ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বের সুমি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। ২০২২ সালের পর সেখানে এটি প্রথম স্থল আক্রমণ। তবে, কিয়েভ তাৎক্ষণিকভাবে এই দাবি অস্বীকার করেছে।
ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির চাপের মধ্যে উভয় পক্ষই যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পরিস্থিতি উন্নত করার চেষ্টা করছে। সৌদি আরবে মঙ্গলবারের আলোচনা এবং জেলেনস্কির উপর ট্রাম্পের আক্রমণ মস্কোকে উৎসাহিত করেছে। ইউক্রেন এবং ইউরোপ উভয়কে পাশ কাটিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কিয়েভকে রিয়াদ আলোচনায় আমন্ত্রণ জানায়নি মস্কো ও ওয়াশিংটন।
সূত্র: এএফপি
এসজেড