পলিপাস একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে গঠিত হতে পারে, বিশেষ করে নাক, কোলন, জরায়ু এবং পাকস্থলীতে। এটি সাধারণত অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির ফলে তৈরি হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকর না হলেও কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। পলিপাস রোগীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মেনে চলা উচিত, যা তাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
প্রথমত, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো জরুরি। নাকের পলিপাস থাকলে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে, ফলে একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কোলন বা অন্ত্রের পলিপাস থাকলে তা ভবিষ্যতে ক্যানসারের রূপ নিতে পারে, তাই নিয়মিত কোলনোস্কপি করানো গুরুত্বপূর্ণ। জরায়ু বা গাইনোকোলজিক্যাল পলিপাস হলে গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে পলিপাসের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা দরকার, যেখানে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম এবং শস্যজাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রক্রিয়াজাত ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এটি অন্ত্রের পলিপাসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, যেমন গাজর, ব্রকোলি, পালংশাক এবং বেরি জাতীয় ফল পলিপাস প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ সম্পূর্ণভাবে বাদ দিতে হবে, কারণ এগুলো শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে পলিপাসের সমস্যা গুরুতর করতে পারে। অতিরিক্ত লাল মাংস ও প্রসেসড ফুড খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অতিরিক্ত ওজন কোলন পলিপাস ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, হাঁটা বা যোগব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
যদি নাকের পলিপাস হয়, তবে ধুলাবালি ও অ্যালার্জিরোধী ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, ধুলাবালি এড়িয়ে চলা এবং হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা সহায়ক হতে পারে। ঠান্ডা বা ইনফেকশনজনিত সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা প্রয়োজন। নাকের পলিপাসের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড স্প্রে, অ্যান্টিহিস্টামিন বা ডিকনজেস্টেন্ট ওষুধ দেওয়া হতে পারে, যা প্রদাহ কমায় এবং শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করে। অন্ত্র বা কোলনের পলিপাস থাকলে প্রয়োজন হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তা সরিয়ে ফেলা হতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি ক্যানসারে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পলিপাসের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে বা পরিবারের কারও যদি কোলন ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তবে আরও বেশি সতর্ক থাকা জরুরি। চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা করানো পলিপাসের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে এবং দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে পারে।