বছর দুয়েক আগে ফুটবল ছেড়েছেন মেসুত ওজিল। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এসে মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরের নানা কারণেই আলোচনায় ছিলেন এই জার্মান কিংবদন্তি। বিশেষ করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে ছবি তুলে জার্মান সমর্থকদের তোপের মুখে পড়েছিলেন তিনি। রীতিমতো জার্মানি জাতীয় দলের প্রতি তার বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তার ফুটবল ক্যারিয়ার দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়ার পেছনে অনেকেই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও দেখে থাকেন। সেই ওজিল এবার নাম লেখাতে যাচ্ছেন রাজনীতিতে।
জার্মানির হয়ে তিনটি বিশ্বকাপে খেলেছেন মেসুত ওজিল। এর মধ্যে জিতেছেন ২০১৪ এর বিশ্বকাপ। জার্মানির ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই মিডফিল্ডারের দাদা জার্মানিতে অভিবাসী হয়েছিলেন তুরস্ক থেকে। সেই পূর্ব পুরুষের দেশের রাজনীতিতেই নাম লেখাচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদ ও আর্সেনালের সাবেক এই তারকা। তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের দলে যোগ দিয়েছেন ওজিল।
৩৬ বছর বয়সী ওজিল ফুটবল ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এরদোয়ানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য আলোচিত হয়েছেন। গত রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এরদোয়ানের নেতৃত্বাধীন একে পার্টির (একেপি) কংগ্রেসে সেন্ট্রাল ডিসিশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বোর্ডে নাম লেখান তুর্কি বংশোদ্ভূত এই সাবেক জার্মান তারকা।
২০১৮ সালের বিশ্বকাপের পর জার্মানি জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন ওজিল। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে লন্ডনে তিনি ও জার্মানি দলের আরেক তুর্কি বংশোদ্ভূত মিডফিল্ডার ইলকায় গুন্দোয়ান ছবি তোলার পর জার্মানিতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। যে কারণে জার্মানি দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন ওজিল।
সে সময় জার্মানির ফুটবল ফেডারেশনের তৎকালীন প্রধান রেইনার্ড গ্রিন্দেল এই দুই খেলোয়াড়কে এরদোয়ানের দ্বারা রাজনৈতিক কারণে প্ররোচিত হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন। জার্মানির অনেকেই ওজিলের জার্মান দলের প্রতি বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকে ২০১৮ বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিতে গিয়ে ওজিল সে সময় তার সমালোচকদের বর্ণবাদী বলে আখ্যা দিয়েছিলেন এবং জানিয়েছিলেন, সেই ছবি তিনি কোনো রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা থেকে তোলেননি, বরং এটি ছিল তার পৈতৃক দেশের সর্বোচ্চ দফতরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
পরের গ্রীষ্মেই ওজিল ইস্তাম্বুলে আমিনে গুলসের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই অনুষ্ঠানে এরদোয়ান উপস্থিত ছিলেন।
এরদোয়ান দুই দশকের বেশি সময় ধরে তুরস্কের শাসনক্ষমতায় আছেন। ২০০৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন এবং ২০০৭ সাল থেকে প্রেসিডেন্টের পদে আছেন। সমালোচকদের দাবি, তিনি তুরস্ককে স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসন করছেন এবং জনগণের মানবাধিকার হরণ করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অবলুপ্তি ঘোষণা করেন এবং অধিকাংশ ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করেন।
২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী ওজিল ক্যারিয়ারের শেষের দিকে ২০২১ সালে তুরস্কের ক্লাব ফেনেরবাচেতে যোগ দেন। এরপর ২০২২ সালে ইস্তাম্বুলের ক্লাব বাসাকশেহিরে যোগ দেন এবং পরের বছর সব ধরনের ফুটবল থেকে অবসরে যান।
ফুটবলের জগতে ওজিলই প্রথম তারকা নন, যিনি রাজনীতিতে নাম লেখালেন। তার আগে তুরস্কের রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছিলেন ২০০২ বিশ্বকাপের আলোচিত তারকা হাকান সুকুর। চেলসি, পিএসজি, মোনাকো এবং এসি মিলানে খেলা লাইবেরিয়ার তারকা জর্জ উইয়াহ তো ২০১৮ সাল থেকে তার দেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গত মাসে ৭৯ বছর বয়সী জোসেফ বোকাইয়ের কাছে হেরে ক্ষমতা হারান তিনি। এছাড়া রোমারিও, আন্দ্রে শেভচেঙ্কোরাও রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছিলেন।
thebgbd.com/NIT