শয়তানের ধোকা মানব জীবনের এমন এক বাস্তবতা, যা কুরআন ও হাদিসের আলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টির সেরা মর্যাদা দিয়েছেন এবং তাদের জন্য জান্নাতের পথ সুগম করেছেন। তবে শয়তান তার কুমন্ত্রণার মাধ্যমে মানুষকে সত্য পথ থেকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে।
কুরআনে বলা হয়েছে, "নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু। সুতরাং তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করো। সে তো তার দলবলকে আহ্বান করে যেন তারা জাহান্নামের অধিবাসী হয়" (সূরা ফাতির: ৬)।
শয়তানের প্রধান কৌশল হলো, মানুষের মনে সন্দেহ ও ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করা। সে মানুষকে আল্লাহর প্রতি অবাধ্য হতে উৎসাহিত করে, গুনাহকে সুন্দর ও লোভনীয় করে তোলে। হাদিসে বলা হয়েছে, শয়তান মানুষের রক্ত স্রোতের মতো দেহে প্রবেশ করে এবং তাকে কুমন্ত্রণায় লিপ্ত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "শয়তান মানুষের মনে এমনভাবে কুমন্ত্রণা দেয়, যেমন রক্ত দেহের শিরায় প্রবাহিত হয়" (সহিহ বুখারি)।
ইবলিস আদম (আ.)-এর প্রতি প্রথম শয়তানি ধোকা দিয়েই তার কর্মযাত্রা শুরু করে। সে আদম (আ.) ও হাওয়াকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জান্নাতের নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ায়। কুরআনে আল্লাহ বলেন, "তাদের উভয়কে শয়তান প্রবঞ্চিত করল এবং তাদের সেই গাছ থেকে খেতে উদ্বুদ্ধ করল" (সূরা আরাফ: ২২)।
মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য শয়তান বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। প্রথমত, সে মানুষকে গুনাহের প্রতি আকৃষ্ট করে। দ্বিতীয়ত, সে নেক কাজকে কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করে। তৃতীয়ত, শয়তান মানুষের মধ্যে অহংকার, হিংসা এবং লোভের বীজ বপন করে।
শয়তানের ধোকা থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর স্মরণ এবং তার নিকট দোয়া করা আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রজিম’ পড়ে, শয়তান তার থেকে দূরে চলে যায়" (সহিহ মুসলিম)। তাছাড়া পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং ইস্তেগফার শয়তানের ধোঁকা থেকে রক্ষার শক্তিশালী মাধ্যম।
শয়তানের ধোঁকার মূল লক্ষ্য হলো মানুষকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে সরিয়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া। তবে যারা আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা রাখে, তার আদেশ মেনে চলে এবং শয়তানের ধোঁকায় পা দেয় না, তারা সফলতা অর্জন করে। কুরআনে আল্লাহ বলেন, "নিশ্চয়ই আমার প্রকৃত বান্দাদের ওপর তোমার কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না" (সূরা হিজর: ৪২)।
thebgbd.com/AR