ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধারা চার ইসরাইলি জিম্মির মৃতদেহ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে হস্তান্তর করেছে এবং এই চার মরদেহ হস্তান্তরের কিছুক্ষণ পরেই মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দীদের আরেকটি দল অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিরে গেছে। গাজা সিটি থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিশ্চিত করেছে তারা ‘চার নিহত জিম্মির’ কফিন পেয়েছে এবং ইসরায়েলে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর আগে, হামাস জানায়, ‘দখলদাররা যাতে বিলম্ব বা বাধার কোনো অজুহাত খুঁজে না পায়’ সেজন্য চার ইসরায়েলির মৃতদেহ একান্তে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ইসরায়েলি মিডিয়া তাদের ওহাদ ইয়াহালোমি, সাচি ইদান, ইতজিক এলগারাত এবং শ্লোমো মানসুর নামে শনাক্ত করেছে।
রামাল্লা থেকে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র সাংবাদিকরা জানান, ইসরায়েল কর্তৃক মুক্তিপ্রাপ্ত ৬শ’ জনের বেশি ফিলিস্তিনির একটি দলকে উৎফুল্ল জনতার সামনে একটি বাস থেকে নেমে যেতে দেখেছেন। মুক্তিপ্রাপ্ত বেশ ক’জন ফিলিস্তিনিকে আনন্দোল্লাস করতে দেখা যায়। তাদের একজনের চারপাশে জড়ো হয়ে একদল নারী আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়ে। একটি শিশু দু’হাতে শান্তির চিহ্ন দেখায়।
তাদের মুক্তি গত সপ্তাহের শেষে দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলায় জর্জরিত মৃত বা জীবিত জিম্মিদের হস্তান্তরের জন্য হামাস কর্তৃক আয়োজিত আনুষ্ঠানিকতার কারণে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হলে ইসরায়েল প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দেয়। এই ক্ষোভ ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া এক ভঙ্গুর গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে কার্যকরের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী গত শনিবার ছয় ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। তাদের সঙ্গে চার জিম্মির মৃতদেহও হস্তান্তর করে। বিনিময়ে ৬২০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে মুক্তি দেয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের। কিন্তু মুক্তি দেয়ার সময় হামাস জিম্মিদের সঙ্গে ‘অসম্মানজনক আচরণ’ করছে অভিযোগ তুলে মুক্তি স্থগিত করে ইসরায়েল।
হামাসের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে সেদিন বলা হয়, আগে ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। এরপরই কেবল গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করবে হামাস।
যুদ্ধবিরতি চূক্তি মূলত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলার ফলে শুরু হওয়া যুদ্ধকে থামিয়ে দিয়েছে এবং ১,১০০ জনেরও বেশি বন্দীর বিনিময়ে এখন পর্যন্ত ২৫ জন জিম্মিকে জীবিত মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে, সহিংসতার বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বুধবার গাজার অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি উৎক্ষেপণ স্থানে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
ওয়াশিংটনে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শীর্ষ দূত বলেছেন, ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা যুদ্ধবিরতির পরবর্তী পর্যায়ে আলোচনার জন্য যাচ্ছেন। স্টিভ উইটকফ মার্কিন ইহুদি কমিটির এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘অনেক অগ্রগতি করছি। ইসরায়েল এখনই একটি দল পাঠাচ্ছে। এটি হয় দোহায় অথবা কায়রোতে হবে। মিশরীয় এবং কাতারিদের সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু হবে।’ চুক্তির প্রথম ধাপ শনিবার শেষ হওয়ার কথা, তবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে শুরু হওয়ার কথা থাকা পরবর্তী ধাপের আলোচনা এখনো শুরু হয়নি।
বুধবার, কয়েক হাজার ইসরায়েলি গাজায় জিম্মি অবস্থায় নিহত শিরি বিবাস এবং তার ছেলেদের শেষকৃত্যে অংশ নিতে জড়ো হয়। ইসরায়েলি পার্লামেন্ট তাদের মৃত্যুতে এবং ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলায় নিহত অন্যান্যদের শোক প্রকাশে এক মিনিট নীরবতা পালন করে।
সূত্র: এএফপি
এসজেড