ঢাকা | বঙ্গাব্দ

রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ এবং প্রতিকারের উপায়

রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর সমস্যা হতে পারে, বিশেষত যাদের হজমের দুর্বলতা রয়েছে।
  • | ০১ মার্চ, ২০২৫
রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ এবং প্রতিকারের উপায় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ

রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর সমস্যা হতে পারে, বিশেষত যাদের হজমের দুর্বলতা রয়েছে। রোজার সময় খাবার গ্রহণের নির্দিষ্ট সময় এবং পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তবে কিছু সহজ উপায়ে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। চলুন দেখি, কীভাবে রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করা যায়।


রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ


১. পানির অভাব: রোজায় দিনে পানি পান না করা কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম প্রধান কারণ। শরীরের তরলজাতীয় উপাদানের অভাবে অন্ত্র শুকিয়ে যায় এবং হজমে সমস্যা হয়।


২. খাবারের ধরনের পরিবর্তন: রোজার সময় সেহরি ও ইফতারে বিশেষ কিছু খাবার খাওয়া হয়, যেমন তেল-মশলাযুক্ত খাবার, মিষ্টি ইত্যাদি, যা হজমে বিলম্ব ঘটাতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সৃষ্টি করতে পারে।


৩. দীর্ঘ সময় অনাহারে থাকা: সেহরি ও ইফতারের মধ্যে দীর্ঘ সময় খাবার না খাওয়ার কারণে পেটের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়, যা কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে।


৪. বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা: কেউ কেউ পূর্বেই হজমের সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকেন, রোজার সময় এসব সমস্যা আরও বাড়তে পারে।


রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর উপায়


১. পানির পরিমাণ বাড়ান: সেহরি ও ইফতারের মধ্যে পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করুন প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার। সেহরি ও ইফতারের মধ্যে পানি পান করার সময়কে ভাগ করে নিন যেন শরীর পুরোপুরি হাইড্রেটেড থাকে।


২. আঁশযুক্ত খাবার খান: ফলমূল, শাকসবজি, শস্যদানা, পনির, দই, ইত্যাদি খাবারে প্রচুর আঁশ থাকে, যা অন্ত্রের কার্যক্রমকে সঠিক রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে সেহরিতে এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন যা দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে।


৩. অতিরিক্ত তেল-মশলা পরিহার করুন: ইফতারে ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তেল-মশলা যুক্ত খাবার খেলে হজমে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এগুলি হজম করতে বেশি সময় নেয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াতে পারে। তাই তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন এবং সেহরি ও ইফতারে হালকা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।


৪. ফলমূল খাওয়া শুরু করুন: ইফতারিতে তাজা ফলমূল যেমন পেঁপে, আপেল, পেয়ারা, আঙুর ইত্যাদি খাওয়া ভালো। এগুলির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং আঁশ থাকে যা হজমের প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে।


৫. হালকা ব্যায়াম করুন: রোজার মধ্যে বেশি পরিশ্রমী কাজ না করলেও হালকা হাঁটাহাঁটি বা টাহলনা সাহায্য করতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে। প্রতি দিন অন্তত ২০-৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে পেটের কার্যক্রম ভালো থাকে।


৬. সেহরিতে চা বা কফি পান করুন: সেহরিতে এক কাপ চা বা কফি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এতে থাকা ক্যাফেইন হজমে সাহায্য করতে পারে এবং অন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে পারে। তবে, অতিরিক্ত চা বা কফি খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি শরীরে ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি করতে পারে।


৭. বিকল্প খাদ্য নির্বাচন করুন: যাদের গ্যাস বা অতিরিক্ত টক্সিনের সমস্যা থাকে, তাদের জন্য পেটের জন্য সহজপাচ্য খাবার যেমন সেদ্ধ ডাল, সেদ্ধ আলু, ভাত ইত্যাদি উপকারী হতে পারে। এসব খাবার অন্ত্রকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।


৮. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে থাকে বা এর সঙ্গে অন্য কোন সমস্যা যেমন পেট ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা যুক্ত হয়, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষত যদি কোনো মেডিকেল কন্ডিশন থাকে যেমন ডায়াবেটিস বা হরমোনাল সমস্যা, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ।


কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টির প্রধান খাবার


তেল-মশলাযুক্ত খাবার: যেমন ভাজি, ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার।


কৃত্রিম মিষ্টান্ন: যেমন কেক, পেস্ট্রি, চকোলেট ইত্যাদি।


সিগারেট এবং মদ: এগুলি হজমের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে।


রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এটি সহজেই প্রতিরোধ করা যায় যদি সঠিক খাবার গ্রহণ এবং দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিবর্তন আনা হয়। পর্যাপ্ত পানি পান, সুষম খাদ্য গ্রহণ, হালকা ব্যায়াম, এবং নিয়মিত সঠিক অভ্যাস রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।