তারাবিহ নামাজ, ইসলামিক শাবান মাসের ১২ তম রাত থেকে শুরু হয়ে, রমজান মাসের মধ্যে মসজিদে আদায় করা হয়। এটি বিশেষভাবে রমজানের রাতের সান্নিধ্যে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা ও আত্মশুদ্ধির জন্য আদায় করা হয়। কোরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে তারাবিহ নামাজের গুরুত্ব এবং কিভাবে এটি আদায় করতে হয়, তা স্পষ্টভাবে জানা যায়।
তারাবিহ শব্দটি আরবি "تَرَاوِيح" থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো ‘বিশ্রাম নেয়া’। এই নামাজে সাধারণত একে একে কিছু রাকাত নামাজ পড়া হয়, যা প্রতি দুই রাকাতে বিশ্রাম নেয়া হয়। এটি একটি সুন্নত নামাজ, যা রমজান মাসের রাতগুলোতে আদায় করতে হয়।
কত রাকাত পড়তে হয় তার ব্যাখ্যা কোরআন বা হাদিসে স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়নি, তবে হাদিসে এসেছে যে, তারাবিহ নামাজ সাধারণত ৮ রাকাত অথবা ২০ রাকাত আদায় করা হয়ে থাকে। উম্মত এবং সাহাবাদের মধ্যে তারাবিহ নামাজের সংখ্যা নিয়ে কিছু পার্থক্য রয়েছে, তবে অধিকাংশ মাযহাব ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজকেই সঙ্গতিপূর্ণ মনে করে।
প্রথমত, মুসলিম সমাজের বিভিন্ন অংশে তারাবিহ নামাজের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কিছু মুসলিম সম্প্রদায় ৮ রাকাত তারাবিহ নামাজ আদায় করে, আবার কিছু ২০ রাকাত পড়েন। উম্মত তাত্ক্ষণিকভাবে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর নির্দেশনা অনুসরণ করেন, তবে বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র অনুসারে তারাবিহ নামাজের সংখ্যা অনুযায়ী সাধারণত ২০ রাকাতই বেশি প্রচলিত হয়ে থাকে।
হাদিসে বলা হয়েছে, "রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের রাতে তারাবিহ নামাজ পড়তেন, এবং সাহাবারা তাঁকে অনুসরণ করতেন। তবে, কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। কিছু সাহাবি একদিন ৮ রাকাত এবং অন্যদিন ২০ রাকাত পড়তেন। এমনকি, হজরত উমর (র.) এ বিষয়টি পর্যালোচনা করে ২০ রাকাত নামাজ স্থির করেন।" (সহিহ বুখারি)
এছাড়া, উমর (র.) নিজেই মসজিদে তারাবিহ নামাজের জন্য ২০ রাকাত নির্ধারণ করেছিলেন। হাদিসে এসেছে, “হজরত উমর (র.) একদিন মসজিদে গিয়ে দেখলেন যে, লোকেরা বিভিন্নভাবে তারাবিহ নামাজ পড়ছে। কেউ এক রাকাত, কেউ দুই রাকাত। তারপর তিনি আবু হুরায়রা (র.) এবং উবায় বেন কাব (র.) কে মসজিদে তারাবিহ নামাজ পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেন এবং ২০ রাকাত আদায় করলেন।” (সহিহ বুখারি)
তারাবিহ নামাজের সময়কাল সম্পর্কে, হাদিসে বলা হয়েছে যে, এটি রাতের যিকর ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আলাদা কিছু হওয়ার একটি উপায়। এটি আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর রহমত লাভের মাধ্যম হিসেবে মেনে নেয়া হয়েছে। এই নামাজের মধ্য দিয়ে একজন মুসলিমকে তাদের পাপ থেকে ক্ষমা চাইতে, আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে এবং ধর্মীয় উন্নতি সাধন করতে বলা হয়েছে।
নামাজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এর মধ্যে সুরা ফাতিহা এবং অন্য সুরা পাঠ করা হয়, প্রতিটি রাকাতে কোন কিছু শিখতে বা উপলব্ধি করতে সাহায্যকারী কিছু আয়াত পাঠ করা হয়, এবং পরে কিছু সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাতে আত্মবিশ্লেষণ বা ধ্যান করা যায়। এজন্য, এই নামাজ আদায় করতে অনেক সময় মসজিদে সাধারণত দীর্ঘ সময় কাটানো হয়, এবং এভাবে মুসলিমরা একে অন্যের সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে।
এভাবে, তারাবিহ নামাজ একদিকে যেমন রমজান মাসের বিশেষ ইবাদত হিসেবে শরীয়ত দ্বারা সুন্নত করা হয়েছে, অন্যদিকে এটি মুমিনের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়।
thebgbd.com/NIT